রিপন ভিডিও, অপু ভাই ও রুচির প্রশ্ন  

WhatsApp Image 2024-09-19 at 12.36.18
মাহীন হক
লেখক ও অনুবাদক
হা হা হা। এটাই বাস্তব সোশাল মিডিয়ায় অন্যতম ভাইরাল ক্যাচফ্রেজ। অলঙ্করণ করেছেন শফিক হীরা



‘বন্ধু তুমি একা হলে আমায় দিও ডাক,
তোমার সঙ্গে গল্প করব আমি সারারাত।’  

অথবা
‘তুমি আমি ফুলের কলি ফুটবো একসাথে,

তোমার আমার দেখা হবে ফুলশয্যার রাতে। 

তুমি দিবে কিছু, আমি দিব কিছু,

সেই থেকে জন্ম নিবে ছোট্ট এক শিশু।’

অথবা
‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর

উপুস মাথায় দিয়ে,

দরজা খুলে যারে দেহুম

তারে করুম বিয়ে’

এইসব বহুল-প্রচারিত পদ্যের রচয়িতা রিপন মিয়া ওরফে রিপন ভিডিও। নেত্রকোনায় কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন। ২০১৬ সালে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলে পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বানানো শুরু করেন। উপরে উদ্ধৃত লাইন দুটোর মত আরো অসংখ্য লাইন সেসময় তিনি আবৃত্তি করে আপলোড করেছেন। মানুষও সুযোগ ছাড়েনি। ইচ্ছামতন ট্রল, প্যারডি করেছে তাকে নিয়ে। এমনকি কোনো এক অদ্ভুত কারণে এতটাই ঘৃণা তার প্রতি কারো কারো জন্মেছিল যে একাধিকবার তার আইডি হ্যাক করে নষ্ট করে ফেলা হয়। যার কারণে ২০১৯-এ তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভিডিও বানানো বাদ দিয়ে কাঠমিস্ত্রীর কাজেই মনোযোগ দেবেন। কিন্তু এরপর কিছুদিন আগে ইন্টারনেটে তার এক প্রকার পুনরুত্থান ঘটে। এখন আর তিনি ছন্দ বলেন না। এখন তিনি নিজের সাধারণ জীবনের চিত্রধারণ করেন, নিয়মিত ভ্লগ আপলোড করেন। এখন আর তাকে আগের মত কটাক্ষের শিকার হতে হয় না। মানুষ তাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর মত পত্রিকায় তাকে নিয়ে প্রতিবেদনও হচ্ছে।  

কিন্তু যেই রিপন ভিডিও কয়েক বছর আগেও এতটা হাসি-তামাশার বিষয় ছিলেন, এতটাই বুলিং-এর শিকার ছিলেন যে সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়েই দিতে চেয়েছিলেন, তিনি কীভাবে এখন এতটা খ্যাতির মালিক হলেন? 
আমার ধারণাটাই বলি। রিপনভিডিও যখন ছন্দ আউড়াচ্ছিলেন তখন তিনি ঢুকে পড়েছিলেন সাহিত্যের দুনিয়ায়। কিন্তু বিদ্যমান যে সাহিত্যসমাজ, সেটা তাকে গ্রহণ করতে খুব একটা উৎসাহী যে ছিল না তা ধারণাই করা যায়। এরকম একটা ‘আনস্মার্ট’ ব্যাটা ‘অশুদ্ধ’ উচ্চারণে, ভুলভাল মাত্রায় একের পর এক পদ্য পড়ে যাচ্ছে সেটা তো মেনে নেয়া যায় না। আমাদের সুরুচির ঠিকাদারদের কাছে এগুলা রুচির দুর্ভিক্ষই। যেরকম আমোদ নিয়ে কোনো শিম্পাঞ্জির পিয়ানো বাজানো দেখে মানুষ, বড়জোর অনেকটা তেমনভাবেই ট্রিট করা যায় সেগুলোকে।    

রিপন ভিডিও ও অপু ভাইয়ের উত্থান এবং ভদ্রবিত্তের মূল্যায়ন আমাদের সমাজের গভীর শ্রেণিচেতনাকে তুলে ধরে। অলঙ্করণ করেছেন সামিউল


যদিও মধ্যবিত্তপ্রিয় সাহিত্যের সাথে রিপন ভিডিওর পদ্যগুলো সাহিত্যগুণের খুব বেশি ফারাক আছে তাও বলা যায় না। লেখক তুহিন খান একবার রিপন ভিডিওর একটা পদ্যের পাশে জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের দুটি লাইন পাশাপাশি বসিয়ে দেখেন। রিপন ভিডিও রচিত লাইনগুলো ছিল ‘পাট ক্ষেতে পাট গাছ, চিকন চিকন পাতা/তুমার কথা মনে পড়লে বুকে লাগে বেতা।’ এবং সাদাত হোসাইনের লাইনটি ছিল ‘এই যে সন্ধ্যা, তারার আকাশ, রাত্রির রঙ জানে/কাছের মানুষ দূরে সরে যায়, কী গোপন অভিমানে!’ তুহিন খান দেখিয়েছিলেন এই দুই লাইনের মধ্যে আদৌ গুণগত কোনো তফাৎ টানার সুযোগ নেই। ফারাক বলতে এইটুকুই যে সাদাত হোসাইনের কবিতা প্রতিনিধিত্ব করে শহুরে মধ্যবিত্ত এস্থেটিক্সের, আর রিপন ভিডিওরটাতে আছে স্বাভাবিক গ্রামীণ অনুষঙ্গ। কিন্তু কোনো শিল্পই তো স্থান-কালনিরপেক্ষ না। টিভ জনগোষ্ঠীর কাছে যখন হ্যামলেটের গল্পটা পড়ে শোনানো হয় তখন তাদের কাছে সে গল্পের মজাটা অধরা থেকে যায়।  কেননা বাবার মৃত্যুতে চাচাই তার স্ত্রীকে বিয়ে করবেন সেটাই তাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়। আবার ভূত হয়ে হ্যামলেটের বাবার ফিরে আসার ব্যাপারটাও তাদের কাছে তেমন চমকদার কিছু বলে মনে হয় না, কারণ মৃতের ফিরে আসা তাদের দৈনন্দিন যাপনেরই অংশ। এর মানে হলো সকল শিল্পকর্মই আসলে নিজের স্থানিক ও কালিক বাস্তবতার যুক্তিকাঠামোর উপর নির্ভরশীল, সেই কাঠামোর বাইরে নিয়ে গেলে সেই শিল্পটাও নিজের অর্থ হারাতে পারে। ফলে তথাকথিত উন্নতরুচির সাহিত্য মূলত কেবল নিজের সামাজিক কন্ডিশনগুলোকে পূরণ করে; এর বেশি কিছু না। তবুও রুচি নিয়ে এক বেহুদা স্তরবিভাগ চলতেই থাকে। এই স্তরবিভাগের আড়ালে থাকে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং শ্রেণিগত পরিচয়। ডেভ হিকির মতে, ‘ক্ষ্যাত রুচিই আসল রুচি, উন্নত রুচি হলো অন্য কারো শ্রেণি-প্রিভিলিজের উচ্ছিষ্ট।’ 

বুরদিও’র মত তাত্ত্বিকেরা রুচি ব্যাপারটাকে দেখতেন ক্ষমতার প্রছন্ন চর্চা হিসেবে। ক্ষমতার বৈধতা ও সাংস্কৃতিক পুনরুৎপাদনের অবিরাম লড়াই চলতে থাকে রুচিশীলতার ময়দানে। ভাষাও এই লড়াইয়ে চিরকাল ভূমিকা রেখে এসেছে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদ’ গ্রন্থে পাই: ‘শ্রেনি-বিভাজনের স্থির রেখাটি এমনকি সংস্কৃত নাটকের নিজের মধ্যেও ছিল। সেখানে সবাই এক ভাষায় কথা বলতো না, রাজপুরুষদের সংলাপের ভাষা সংস্কৃতই হতো, কিন্ত রাণী ও তাঁর সখীরা কথোপকথন করতো শৌরসেনী প্রাকৃতে, আর সাধারণ মানুষের ভাষা ছিল মাগধী প্রাকৃত, যে মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব বলে মনে করা হয়।’ ফলে সাহিত্য যেহেতু এখানে উচ্চকোটির ভাষিক সৌখিনতার পরিসর, ফলে সেখানে এইসব গাঁইয়াদের অনুপ্রবেশ মেনে নেয়ার সুযোগ নাই। কাব্য করতে আসা রিপন ভিডিও মূলত এই কারণেই তোপের মুখে পড়েন।

কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন রিপন ভিডিওর উত্থান ঘটে, তখন আর তিনি কবিতা বলেন না। এখন তিনি নিজের সহজ-সরল জীবনের ভ্লগ বানান। রিক্সা চালানোর, কাঠমিস্ত্রির কাজের, ছোটখাটো হোটেলে তৃপ্তি নিয়ে ভাত খাওয়ার ভিডিও বানান। যেই রূপে একজন নিম্নবিত্ত কাঠমিস্ত্রিকে আমরা দেখতে চাই, ঠিক সেই রূপেই হাজির থাকেন সর্বদা। কিছুতেই আমাদের জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন না, আমাদের শ্রেণিপরিচয়ে ভাগ বসাতে আসেন না। ফলে এখন তাকে গ্রহণ করা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে। তাকে নিয়ে খোলামনে আমরা এখন মাতামাতি করতে পারি।  

শ্রেণিপরিচয়ের প্রতি যে হুমকির কথা বললাম তার নজির হিসেবে হাজির আছেন অপুভাই। নোয়াখালির সোনাইমুড়ির এক নাপিত টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। গ্রামের ক্ষ্যাত এক ছোকরা নিজের ইচ্ছামত চুলে রঙ করে, ভাঙাচোরা উচ্চারণে বড় বড় ডায়লগ মারবে সেটা শহুরে স্মার্টদের সহ্য হবে কেন? ফলে অনেক বড় বড় ইউটিউবার সেই সময় অপুভাই এবং অন্যান্য টিকটকারদের নিয়ে যথেচ্ছ ট্রল ও রোস্ট করেছেন। টিকটক বনাম ইউটিউবের একটা মোটামুটি বড় আকারের ক্যাচালও তখন চালু ছিল। তখন পর্যন্ত ইউটিউব ছিল মোটামুটি স্মার্ট, উচ্চমধ্যবিত্ত ক্রিয়েটরদের প্ল্যাটফর্ম, আর টিকটক ছিল গাঁইয়া ক্ষ্যাতদের। এতক্ষণে আর বলে দিতে হবে না যে টিকটক বনাম ইউটিউবের সেই লড়াই আদতে ছিল এই দুই শ্রেণির মধ্যকার লড়াই। যাকগে, সেইসব ট্রলে অপুভাইর তেমন ক্ষতি হয়নি, বরং ফলোয়ার আরো বেড়েছে। জেলহাজতও খেটেছেন। পরে দুবাইতে চলে যান। এখন সেখানে বসেই কিছুদিন আগে একটা ল্যামবোরগিনি কিনেছেন যার দাম ৮ লাখ ২৫ হাজার দিরহাম (বাংলা টাকায় প্রায় ২ কোটি ৭২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।) গাড়িটা আদৌ তিনি কিনেছেন কিনা সেটা নিয়ে যদিও তর্ক আছে। তবু, তার ব্যাপারে মধ্যবিত্তের মতামত কী সেটা যেকোনো মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় তাকে নিয়ে করা খবরের কমেন্টে গেলেই পাবেন। যে ভবিষ্যৎ আমরা নিজেদের জন্য বর্গা নিয়ে রেখেছি সেটা আচানক এক ক্ষ্যাত টিকটকার পুরাপুরি ভিন্নপথে নিজের জন্য বাগিয়ে নিল এটা হজম করা নিশ্চয়ই সহজ নয়। 

এখন যদি রিপনভিডিও কালকে হঠাৎ রিক্সা ছেড়ে গাড়িতে উঠে বসে, নিজের জন্য নির্মিত শ্রেণিবিন্যস্ত খুপড়ির থেকে বের হয়ে আসতে যান, এবং তাহলে তাকে যদি আরেক দফা ভয়াবহ বুলিং-এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়, আমি অবাক হবো না। কারণ শ্রেণিরুচির ও শ্রেণিঘৃণার কঠিন নিগড়ে বন্দী আমাদের এস্থেটিক সমাজে এটাই বাস্তব!       

থেকে আরও পড়ুন

খাওয়ার বদলে ‘বাইরে খাওয়া’—বাঙালি মধ্যবিত্তের নতুন বন্দোবস্ত?

ম্যাচ শেষে আফগানিস্তান কোচ জনাথন ট্রট বলেন তার এই ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই, ‘আমার কোন ধারণা নেই। কখনো কি দুটি সুপার ওভার হয়েছে? আমি এটাই বলার চেষ্টা করেছি। এটা একদমই নতুন ব্যাপার। নিয়মগুলো আমরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করছি, জানছি।’

সিমু নাসের

সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক

'টুয়েলফথ ফেল'কে কেন্দ্র করে মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়েই এই লেখা। ভারত ও বাংলাদেশে 'টুয়েলফথ ফেল' সিনেমাটির জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হলো এর প্রেমকাহিনী।

খাওয়ার বদলে ‘বাইরে খাওয়া’—বাঙালি মধ্যবিত্তের নতুন বন্দোবস্ত?

নব্বই দশকের এক্কেবারে শুরুর দিক। হুট করে বাড়িতে ফুপা এসেছেন। যেমন-তেমন আসা না। বিদেশ থেকে এসেছেন, ঢাকায় একবেলা বিশ্রাম নিয়ে তারপর আস্তে-ধীরে বাড়িতে যাবেন। যেহেতু হুট করে আসা, বাসায় নেই কোনো প্রস্তুতি। ‘অগত্যা’ আনানো হলো নান্নার মোরগ-পোলাও। জামাই-মানুষ, তারপরও রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনানো হচ্ছে, বাসার মানুষদের মনে হচ্ছে খুবই কুণ্ঠিত। আমাদের ছোটোদের তাতে কী আসে যায়! বাসার মাঝে ‘হোটেলের খাবার’, নতুন ব্যাপার-স্যাপার! বহুদিন মুখে লেগে ছিল সেই মোরগ পোলাওয়ের স্বাদ।  

একই বাসা। সময়ের সাথে সাথে বদলেছে বাসার ‘মুরুব্বির আসন’। আবার এসেছে জামাই, সেটা আমার বোন-জামাই। সিদ্ধান্ত হলো, প্রায় প্রায়ই যেহেতু এখানে-সেখানে এটা-সেটা খাওয়ানো হয়, জামাইয়ের সম্মানে এবার ঘরে রান্না করা হবে। হলো রান্না। একেবারে আয়োজন করা রান্না—এখনকার সময়ে অনেকটা বিরল অভিজ্ঞতা! এই খাবারের স্বাদও মুখে লেগে রইল অনেকদিন।  

ওপরের উদাহরণটা নিছকই উদাহরণ, নিজের জীবন থেকে নেওয়া একটা উদাহরণ আরকি। কিন্তু এদেশের অন্তত শহরাঞ্চলে তাকালে দেখা যায়, এটা মোটেও আমার একার উদাহরণ না। গত কয়েক দশকে ঢাকার মধ্যবিত্ত সমাজের ‘বাইরে খাওয়া’ বিষয়টা ‘একেবারে না-পারতে’ বা ‘ঠ্যাকায় পড়ে খাওয়া’ থেকে হয়ে উঠেছে প্রাত্যাহিক বাস্তবতা। এটা এখন এমনই এক বাস্তব সত্য, যেটাকে যুক্তি-তর্ক দিয়ে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করার কিছু নেই। তারপরও বলি। বাংলাদেশের কুইক সার্ভিস রেস্তোরাঁ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে এই বাজারে আয় হয়েছে প্রায় ১৭৫৪ মিলিয়ন ডলার। ২০২৮ সালেই যা গিয়ে দাঁড়াবে ২৬৫৩ মিলিয়ন ডলারে। বুঝতে পারছেন ব্যাপার? ফুলেফেঁপে কলাগাছ পার হয়ে বটগাছ হয়ে যাওয়ার অবস্থা! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো দ্রুত পরিবর্তিত কর্মজীবন, বাড়ন্ত মধ্যবিত্ত আর খাবারের অনলাইন ডেলিভারি।

কিন্তু কেন বলছে বিশেষজ্ঞরা এমন? আসলেই কি যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দিয়ে ধরা যায় একে?
চলুন চেষ্টা করি। 

যুক্তি ১: সময় কখনও ‘নানের’ জন্য অপেক্ষা করে না 

আজকের শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনে মহামূল্য এক সম্পদ, তার নাম সময়। বিশেষ করে যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মজীবি, সেখানে বাসায় ফিরে রান্না-বান্না করার সময়ই কই; সেইসাথে মানসিক শক্তি আর আগ্রহই বা কই। আগে যেখানে স্কুল বা অফিস আর বিকালে টিভি দেখে, আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় টিভি দেখা ছিলো চক্রের মতো চলমান; এখনকার জীবনে কী যে হয়ে যাচ্ছে সেই তাল মেলানোই কঠিন! দ্রুতগামী, ব্যস্ত ও অনেকখানি বিশৃঙ্খল। 

কর্মব্যস্ত পরিবারে যদি বলা হয় ছুটির দিনটা বাইরেই খাওয়া যাক—এরচেয়ে খুশীর কথা আর নেই। অফিস শেষে জ্যাম ঠেলে বাড়ি এসে আবার বাজার করা, রান্না করা—এসবের বদলে ১৫ মিনিটে রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসে পড়া কী যে স্বস্তির! অনেকে আবার থাকেন ব্যাচেলর। একা বাসায় নিজের জন্য রান্না আর কতক্ষণ ভাল্লাগে—অন্তত বিকল্প যখন হাতের কাছেই আছে? তাই রেস্টুরেন্ট হয়ে উঠছে এক বিকল্প সংসার। সেই রেস্টুরেন্টের জানালার ছবি তুলেই মানুষ স্টোরিতে মিউজিক বসায়—আমার জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়।  

পাল্টা যুক্তি ১: ফুড ডেলিভারি অ্যাপেও তো সময় বাঁচে। তাহলে মানুষ রেস্টুরেন্টে যায় কেন? 

ভালো যুক্তি। ফুড ডেলিভারি অ্যাপ আছে। অ্যাপের ব্যবহারও আছে। বিশেষ করে ব্যস্ত অফিসের ফাঁকে টুক করে পছন্দের খাবারটা খেয়ে নিতে, কিংবা রেস্টুরেন্টে যাবার আলস্যি বা অসুবিধা থেকে বাঁচতে ঘরে বসেই অর্ডার করেন অনেকে। আছে বিভিন্ন হোম কিচেন, সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ। মানুষ সেখান থেকেও অর্ডার করছে। বিশেষ করে কোভিডের লকডাউনে এইসবই মানুষকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ দিয়েছিল ভালোভাবে। 

এই পাল্টা যুক্তির উত্তরও আবার আছে। খাওয়ার ব্যাপারটা এই সময়ে এসে আপনি শুধু উদরপূর্তি দিয়ে দেখলেই তো হবে না! রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়াটা একধরনের সামাজিকতা, মুড পরিবর্তন, সময় কাটানো। অনেক সময় ফ্লেক্স নেওয়াও। এই আউটিঙের স্বাদ ভাই আপনাকে ফুড ডেলিভারি দিতে পারবে না! হ্যাঁ, ফুড ডেলিভারিতে অর্ডার করে খাচ্ছে মানুষ। কিন্তু আরও বহু বহু মানুষ রেস্টুরেন্টে যাচ্ছে। ফেলে ছড়িয়ে খাচ্ছে, হাহাহিহি করছে, ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান দিচ্ছে—দেখো আমি একটা সুখের সময় কাটাচ্ছি, রেস্টুরেন্টে ভালোটা-মন্দটা খাচ্ছি। 

যুক্তি ২: রেস্টুরেন্টের ছাড়া বিনোদনের আর বিকল্প কোথায়? বিকল্প দেখানোর মানুষটাও তো এখন নাই! 

হ্যাঁ, মানুষ ছিলেন একজন আমাদের। তিনি আমাদের ডিমের বিকল্প দেখিয়েছেন, বেগুনের বিকল্প দেখিয়েছেন, মাংসের বিকল্প দেখিয়েছেন। ওই যে, কাঁঠালের বার্গার বানিয়ে খেতে বললেন। কিন্তু, মানুষটা চলে যাওয়ার পর কেউ আর আমাদের বিকল্প দেখায় না! ঢাকা শহরে বিনোদনের জন্য খুব অল্প পার্ক, আরও অল্প খেলার মাঠ। মানুষ দুদণ্ড বসবে কোথায়? আর যেখানে গিয়ে বসতে পারে, সে জায়গার নিরাপত্তা কোথায়? আর যে জায়গায় এগুলোও ম্যানেজ করা সম্ভব, তেমন জায়গায় এন্টারটেইনের সুযোগ কোথায়? হাতেগোনা লাইব্রেরি, ধীরে ধীরে কমতে থাকা সিনেমা হল, নাট্যমঞ্চ। নাটোরের বনলতা সেনও নেই, আর আপনিও জীবনানন্দ দাশ না যে কেউ আপনাকে দুদণ্ড শান্তি দেবে। তাহলে?

শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে, তারসাথে পাল্লা দিয়ে কমছে বিকল্প বিনোদনের জায়গাগুলো। আর, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেস্টুরেন্ট। সেটারও নানান রকমভেদ। কাজিনরা সব একসাথে হলে হইহই করে পুরান ঢাকায়, অফিসিয়াল মিটিঙে ধানমণ্ডির কোনো কফিশপ, বনানির কোনো রুফটপ রেস্টুরেন্ট। একান্তে নিজের মানুষটার সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে হয়তো পাঁচতারা হোটেলে বাই ওয়ান গেট ওয়ান কার্ড যোগাড় করে ব্যুফে! অথবা রাস্তার কোনো সস্তা হোটেলে বদ্ধ কেবিনে বন্দী দুজনে রুদ্ধশ্বাস কত অপেক্ষার! খাবার এখানে মুখ্য না, উপলক্ষ মাত্র। 

এমনকি রেস্টুরেন্টে জন্মদিন পালন, অফিসের ফেয়ারওয়েল, স্কুল-কলেজের রিইউনিয়ন, আর প্রপোজ করার ঘটনাও এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবার যেন পার্শ্বচরিত্র, প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ‘স্থান’।

পাল্টা যুক্তি ২: কিছু খোলা পার্ক, বইমেলা, কিংবা রবীন্দ্র সরোবরও তো আছে! 

আছে। সেইসাথে এখনকার সময়ের মধ্যবিত্তের ভিন্ন রকম চাহিদাও আছে। পার্কে বসে বাদাম ছিলতে ছিলতে ভাব-ভালোবাসার কথা বলতে ভালোই লাগে। একবার-দুবার, তারপর? তারপরই বসতে গেলে আপনার দরকার হবে মোবাইলে চার্জ দেওয়ার। একটা আরামদায়ক চেয়ার। ওয়াইফাই। সুযোগ থাকলে এসি। তারচেয়ে বড় জিনিস, প্রাইভেসি! এই জিনিস প্রতিটা মানুষ প্রাপ্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রেস্টুরেন্টেই ওটা এখন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। অন্তত অন্যান্য জায়গার মতো রেস্টুরেন্টে আপনি বা আপনারা প্রধান দ্রষ্টব্য না।

তারপর নিরাপত্তা, মশার হাত থেকে বাঁচা, কারেন্ট চলে গেলে জেনারেটর। ও ভালো কথা, রেস্টুরেন্টে কিন্তু খাবারও পাওয়া যায়। 

এই আধুনিক আরামগুলো নগরবাসী খোঁজে। তাই সে উপভোগ করতে বের হতে চাইলে প্রথমে এটা সেটা বিকল্প হাতড়ায়, তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে তাকেই বলতে শোনা যায়, এই জানিস, অমুক রেস্টুরেন্টের ফিশ বার্গারটা কিন্তু দুর্দান্ত। অ্যাম্বিয়েন্সটাও ইনস্টা ফ্রেন্ডলি। চলে আয় ৫টায়। আড্ডা হবে। 

যুক্তি ৩: সামাজিক স্ট্যাটাস ও মিডিয়া প্রভাব—‘রেস্টুরেন্ট কালচার’ এখন একধরনের স্বীকৃতি

খাবার কী খাচ্ছেন, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে খাচ্ছেন—খাবার নিয়ে একটা পুরানো দর্শন। এই দর্শনই এখনকার বিশ্বে অনেকটা আপ্তবাক্য হয়ে উঠেছে। আর আপনি কীভাবে খাচ্ছেন, কোন পরিবেশে খাচ্ছেন, সেটা দেখাতে এই সোশ্যাল মিডিয়ার জমজমাট সময়টাই তো মোক্ষম!  ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের কল্যাণে খাবার এখন শুধু খাওয়ার বস্তু নয়—এটা দেখানোর, উপস্থাপনের ও ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। কফিশপে বসে ‘সিনামন লাতে’ খাওয়ার ছবি, কোনো নতুন ফিউশন রেস্টুরেন্টে গিয়ে ওপেন কিচেনের ভিডিও—এসব এখন একধরনের ‘লাইফস্টাইল স্টেটমেন্ট’। উঁহু, নাক বেঁকিয়ে লাভ নেই, ওটা আপনিও করেন। হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি/ভিডিও/টেক্সট দেন, অথবা দেখেন, অথবা দুটাই করেন। রান্নার মতোই গুরুত্বপূর্ণ এখন ‘রিভিউ করা’, ‘ভ্লগ বানানো’, ‘রেটিং দেওয়া’ । ভোজনরসিকতা এখন শুধু রসনা তৃপ্তি না, সামাজিক পুঁজি অর্জনের পথও বলা চলে।

এই অংশে আরও বলা দরকার—খাদ্যসংস্কৃতির এ যে পরিবর্তনটা ঘটছে, তার মধ্য দিয়ে এখন শ্রেণি, রুচি, ও চিন্তার নতুন ‘সাংস্কৃতিক মানচিত্র’ তৈরি হচ্ছে। বনানীর রুফটপ রেস্টুরেন্ট আর মোহাম্মদপুরের পারিবারিক খাবারের দোকান—দুটার ভিজ্যুয়াল ও ভাষা আলাদা। ফলে এই রেস্টুরেন্ট কালচার শ্রেণি-ভিত্তিক সংস্কৃতি গঠনের মাধ্যমেও পরিণত হয়েছে।

পাল্টা যুক্তি ৩: আমরা কী খাচ্ছি—সেটা কি এখন গৌণ হয়ে উঠেছে?

এই প্রবণতার ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক বিপন্নতা। খাবার এখন কেবল দেখার বিষয় হয়ে গেছে। স্বাদের, পুষ্টির বা ইতিহাসের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ‘প্রেজেন্টেশন’। বুমারসের চাইনিজ প্ল্যাটার নাকি লায়লাতির চাইনিজ প্ল্যাটার—কোনটা ইনস্টাগ্রামে ফটোজেনিক, সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখ্য ।

সত্যি বলতে, এই প্রবণতা একধরনের বিকৃতি তৈরি করছে। তবে এটাও মানতে হবে, খাবার কেবল পুষ্টি বা স্বাদের বিষয় নয়—এটাও একধরনের গল্প বলার উপায়। রেস্তোরাঁয় খাওয়ার মাধ্যমে অনেকে নিজেদের অভিব্যক্তি, রুচি এবং চিন্তার পরিচয় দিতে চায়। তাতে কোনো সমস্যা নেই, তবে স্বাদের, শিকড়ের আর অর্থপূর্ণ সামাজিকতার জায়গাটা যেন থাকে।

যুক্তি ৪: মধ্যবিত্তের পকেট ফ্রেন্ডলি বিলাস 

একসময় রেস্টুরেন্ট মানেই বিলাসিতা। এখন সেটাই অনেক মধ্যবিত্তের জন্য ‘সাশ্রয়ী বিলাস’। এক কাপ কফি কিংবা ২০০ টাকার একটি বিরিয়ানি প্লেট দিয়ে আপনি নিজেকে একটু ‘পুরস্কৃত’ করতেই পারেন। ভ্রমণ বা বড় বিনোদনের সুযোগ যেখানে সীমিত, সেখানে এই ছোটো খরচেই অনেক মানুষ আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে।

শহুরে ক্লান্তি, কাজের চাপ, পারিবারিক সংকট—সবকিছু থেকে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া যায় এই খাবার-কেন্দ্রিক সামাজিকতায়। অন্য মানুষের কথা কী বলবো, আমিই তো ঠিক করে রেখেছি এই লেখাটা শেষ করে এক প্লেট ঝাল দেওয়া ভেলপুরি খাব। একটা ‘মাইক্রো রিওয়ার্ড’ না পেলে কি চলে?

অনেকে একা যান, অনেকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে যান। যান অনেকেই। রেস্তোরাঁ আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছে একধরনের মানসিক আশ্রয়।

খাবার কী খাচ্ছেন, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে খাচ্ছেন—খাবার নিয়ে একটা পুরানো দর্শন। এই দর্শনই এখনকার বিশ্বে অনেকটা আপ্তবাক্য হয়ে উঠেছে। অলঙ্করণ করেছেন সামিউল

পাল্টা যুক্তি ৪: এই ‘সস্তা বিলাসিতা’র জন্য কি আমরা হারাচ্ছি দীর্ঘমেয়াদে আত্মনির্ভরতা?

খাবার নিজে রান্না করা, নিজস্ব খাদ্য সংস্কৃতি বজায় রাখা একধরনের আত্মপরিচয়ের অংশ। যখন পরিবার নিজেরা রান্না করা বন্ধ করে দেয়, তখন খাবারের মধ্যে থাকা পারিবারিক বন্ধনও হারিয়ে যেতে পারে।

এ নিয়ে অবশ্যই ভাবা দরকার। তবে প্রতিদিনের একঘেয়েমি ও চাপ থেকে স্বস্তি পেতে যদি রেস্তোরাঁয় যাওয়া হয়, তা হলে সেটাকে পুরোপুরি নেতিবাচক না বলে, তা ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। হ্যাঁ, সচেতনতা জরুরি—কোথায় থামতে হবে, সেটাও জানতে হবে।

যুক্তি ৫: শ্রেণি-নির্ভর রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি—নতুন সামাজিক বিভাজন?

শহরের রেস্তোরাঁ সংস্কৃতির প্রসার নতুন এক সাংস্কৃতিক শ্রেণি তৈরি করেছে। দামি রুফটপ ক্যাফে, ফিউশন রেস্টুরেন্টে যাওয়া এখন নিম্নমধ্যবিত্ত বা শ্রমজীবী মানুষের জন্য দুর্লভ। যার কারণে এই রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি একধরনের সামাজিক বিভাজনেরও প্রতীক হয়ে উঠছে—যেখানে কিছু মানুষ শুধু ফেসবুক ছবির মাধ্যমে এই জীবনযাপনকে চেনে।

পাল্টা যুক্তি ৫: নতুন উদ্যোক্তা, ফুড কার্ট, লোকাল খাবার—এই বিভাজন কি কাটিয়ে উঠছে?

হ্যাঁ, ফুড কার্ট, লোকাল ফুড আর নতুন উদ্যোক্তাদের কারণে এই ফাঁকও কিছুটা কমছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তরুণ উদ্যোক্তা বা এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেই এখন এমন অনেক হোম-বেইজড ফুড বিজনেস গড়ে উঠছে যারা তুলনামূলক কম দামে বৈচিত্র্যময় খাবার পরিবেশন করছে। ফলে একধরনের ইনক্লুসিভিটির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ব্যাপারটা আমাদের মনোযোগ দাবি করে—খাদ্য যদি আত্মপ্রকাশ হয়, তবে তা যেন কেবল এক শ্রেণির একচেটিয়া না হয়। শহুরে খাদ্যচর্চায় একইসাথে ইনক্লুসিভিটি রাখা আর বহুমাত্রিক হওয়া খুবই প্রয়োজন। 

এতসব যুক্তিতে তাহলে কী দাঁড়াল? 

বলতে গেলে কিছু দাঁড়ায় নাই। কোনো কিছু দাঁড় করানো এই লেখার উদ্দেশ্যও না আসলে। এই সময়ে ‘বাইরে খাওয়ার’ দৃশ্যপটটা কথায় কথায় একটু সামনে নিয়ে আসা আরকি।

বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্তের বাইরে খাওয়ার প্রবণতা নিয়ে যারা নাক উঁচু করেন, তারা প্রায়ই একটা আদর্শ বাঙালি পরিবার কল্পনা করেন—যেখানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সবাই একসঙ্গে খায়, মা রাঁধেন, বাবার পছন্দের তরকারি হয়, এবং সন্তানরা ‘বাসার খাবারেই তৃপ্ত’ থাকে। এই কল্পনা এই সময়ে এসে যতটা না বাস্তব, তার চেয়ে বেশি এক ধরনের আদর্শিক নস্টালজিয়া।

বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্তের রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভ্যাস তাই এখন আর শুধু খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন না, একটা বিস্তৃত জীবনচর্চার অংশ। এটাকে বলা যায় সময়ের ব্যবস্থাপনা, সামাজিক অবস্থানের প্রকাশ, বিনোদনের ঘাটতির প্রতিক্রিয়া আর একধরনের মানসিক মুক্তির খোঁজ।

শহরে যদি বিকল্প সাংস্কৃতিক পরিসর, নিরাপদ উন্মুক্ত স্থান ও সাশ্রয়ী বিনোদনের ব্যবস্থা বাড়ানো যায়, তাহলে মানুষ রেস্তোরাঁকে একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে নির্ভর করা কমিয়ে দেবে—এটা বলতে সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না। কিন্তু তার আগে আমাদের স্বীকার করতে হবে—রেস্তোরাঁ এখন আর শুধু খাওয়ার জায়গাই না। এটা হয়ে উঠেছে জীবনযাপন, আত্মপ্রকাশ ও আধুনিক শহুরে বাস্তবতার প্রতীকও।

আমাদের প্রয়োজন এই পরিবর্তনের গভীরে যাওয়া—তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বুঝে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার অভ্যাসকে আরও অর্থবহ, ভারসাম্যপূর্ণ আর সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করা। এই আরকি।