নারীমুক্তি প্রসঙ্গে কেতকী  কুশারী ডাইসন 

Katoki-kushari
কেতকী কুশারী ডাইসন

মনে পড়ছে আমার ক্যানাডাবাসের কোনো এক সময়ে আমি আমার সদ্যোজাত প্রথম সন্তানটিকে মানুষ করা আর অন্যান্য গার্হস্থ্য দায়িত্ব পালন করা ছাড়া ‘আপাতত আর কিছুই করছি না’ জেনে একটি বাঙালি যুবক অকপট বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। আমাদের ধারে-কাছে কোনো দাসদাসীর উপস্থিতি যে ছিলো না তা তো বলাই বাহুল্য, উল্লেখ করা যেতে পারে যে সে-দেশে আমার অথবা আমাদের সন্তানের পিতার কোনো আত্মীয়-স্বজনও ছিলেন না। ফলে ঘরের কাজ আর নবজাতকের দেখাশোনা নিয়ে আমরা দুজনেই বেশ ব্যাস্ত ছিলাম। তার আগে আমি বিলেপ্তে সপ্তাহে তিনবার দৈনিক চার ঘন্টা ট্রেনে যাতায়াত করে চাকরি করতাম; আমার ধারণা ছিলো বিয়োবার জন্যে মেয়েরা কিছু অবকাশ নিতে পারে; হাজার হোক, প্রসূতির প্রসবোত্তর দূর্বলতা থেকে সেরা ওঠার ব্যাপারটা তো আছে, এবং আমার প্রথম প্রসব যথেষ্ট কঠিনই হয়েছিলো, কিন্তু সেসব বোধ করি ছিলো যুবকটির ধারণার বাইরে। আমি তাকে তখনই জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন, সংসার সামলানো আর ছেলে মানুষ করা বুঝি কোনো কাজের কাজ নয়? তিনি লজ্জা পেয়ে তৎক্ষণাৎ স্বীকার করেছিলেন যে, হ্যা ওগুলোও মর্যাদাসম্পন্ন মনুষ্যকর্ম বটে। 

অবশ্য ক্যানাডায় থাকাকালীন আমি যে ‘আর কিছুই’ করিনি তাও ঠিক কথা নয়। কিছু কবিতা আর গ্রন্থসমালোচনা লিখেছিলাম (আমার ধারণা আর্জেন্টাই লেখক বর্হেস সম্পর্কে বাংলায় দু’চার কথা হয়তো বা আমিই প্রথম লিখি, এবং সেটা লিখেছিলাম ক্যানাডা থেকে); তাছাড়া স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের জন্য কিছু খাতা দেখেছিলাম এবং সাহিত্যের ব্যাপারে একেবারেই সংবেদনশূন্য একটি ছাত্রীকে কয়েকটি টিউটোরিয়ালও দিয়েছিলাম। বসন্তসমাগমে পুষ্পোদগম দেখে কবিদের চিত্ত যে পুলকিত হয়ে ওঠে এই সাধারণ তথ্যটাও মেয়েটির জানা ছিলো না, এবং বেশ মনে আছে তাকে বাগানে নিয়ে গিয়ে ফুলটুল দেখিয়ে ব্যাপারটা বোঝানোর একটা চেষ্টা করেছিলাম।  

বাঙালি যুবকটির সঙ্গে কথাবার্তার এই অভিজ্ঞতাটির বিপরীত কোণে অবস্থিত স্বল্পকাল পরবর্তী আরেকটি অভিজ্ঞতা। তখন আমি জাতে উঠেছিঃ দু’টি বাচ্চা মানুষ করছি, একই সঙ্গে অক্সফোর্ডে একটি বৃহদায়তন স্নাতোকোত্তর গবেষণাও আরম্ভ করেছি। ( আমার বিয়ের পর আমার জননী ও শ্বশ্রুঠাকুরাণী দু’জনে দুই ভিন্ন দেশের, দু’টি ভিন্ন সমাজের মহিলা হওয়া সত্ত্বেও দিয়েছিলেন একই সদুপদেশঃ পতিদেবতার স্নাতকোত্তর গবেষণার কালে সন্তান উৎপাদন ক’রে আমি যেন তার সাধনার বিঘ্ন না করি। সুবোধ বালিকার ন্যায় সে-উপদেশ আমি গ্রহণ করেছিলাম ব’লে শেষ পর্যন্ত কোলে-কাখে দুটি বাচ্চা নিয়ে নাকানি-চোবানি খেতে খেতে স্নাতকোত্তর গবেষণা করতে হয়েছিলো আমাকেই)। 

ঐ অবস্থা আমার অক্সফোর্ডের কলেজের একটি সান্ধ্য ভোজে আমার আসন নির্দিষ্ট হয় ইংরেজি সাহিত্যের জাঁদরেল অধ্যাপিকা ডেইম হেলেন গার্ডনারের পাশে। তিনি আমার গবেষণার তত্ত্বাবধায়িকা ছিলেন না এবং আমার অবস্থা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতেনও না। যখন কথাক্রমে কিছুটা অবগত হলেন তখন বেশ বকুনি দিয়েই যা বললেন তার সারমর্ম হচ্ছে এইঃ ‘তোমরা আজকালকার মেয়েরা দুটো আলাআ দুনিয়ার সুযোগসুবিধগুলো পেতে চাও, এ তোমাদের বড় দুঃসাহস। আমাদের সময়ে এত আদেখলাপনার সুযোগ ছিলো না। হয় বিবাহ ও সংসারধর্ম, নয় বহির্জগতের কর্মজীবনঃ এ দুটোর মধ্যে একটাকে আমাদের বেছে নিতে হতো। ও দুটো একসঙ্গে হয় না। যেকোনো একটাকে বেছে নিতে হয়।’ সারাজীবন অবিবাহিতা থেকে হেলেন গার্ডনার অবলম্বন করেছিলেন দ্বিতীয় বিকল্পটিকেই এবং তার কর্মজীবনে এমনই দীপ্তির পরিচয় দিয়েছিলেন যে অবশেষে উপনীত হয়েছিলেন সরকার-প্রদত্ত ‘ডেইম’ খেতাবটিতে।  

পরে ঐ কলেজের তৎকালীন আরেক রত্নবিশেষ, —ইতিহাস বিভাগের রিসার্চ ফেলো, আমার চাইতে বয়সে খানিকটা বড়, তিন সন্তানের জননী, যিনি কিনা সংসারধর্ম এবং কেরিয়র দুই নৌকাতেই পা রেখে স্রোত অতিক্রম করছিলেন,— এ বিষয়ে আমাকে যা বলেছিলেন তার সারাংশ এইরকমঃ আসলে এই দুরুহ সমন্বয় যে কোনো নারীর একেবারে অসাধ্য তা নয়, কিন্তু এ কাজে সফল হতে হলে আরও কান্ডজ্ঞান থাকা চাই। আপনি বিয়ে করেছেন আপনার এক সমবয়সীকে, যিনি নিজে এখনো তার কর্মজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত নন। আমি বিএ করেছি আমার চাইতে দশ বছরের বড় চাকুরিজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত একজন অধ্যাপককে। ফলে কতগুল সুবিধা পাই। যেমন বিবিধ গার্হস্থ্য গ্যাজেট, বাচ্চা ধরার জন্যে একজন সহায়িকা। আপনার উচিৎ ছিলো অর্থের বনিয়াদে সুদৃঢ় বয়োজ্যেষ্ঠ একজন পুরুষমানুষকে পাকড়াও করা।’ শুনে কিছুটা থাবড়ে গেছিলাম,— গোড়াতেই গলদ হয়ে গেছে?— কিন্তু যা-ই হোক, বেচারা সমবয়স্ক জীবনসঙ্গীকে তালাক দিইনি। স্বীকার করতে আপত্তি নেই, সে বেচারা আমার জন্যে জীবনে অনেক স্বার্থত্যাগ করেছে। 

এই যে পুস্তক সমালোচনার নাম ক’রে কেবল ব্যক্তিগত কথা ব’লে  যাচ্ছি, তার কারণ বর্তমান প্রসঙ্গে কথাগুলো একটিও অবান্তর নয়। উপরে যে-বইটির নাম দিয়েছি সেটি মেয়েদের জীবনের এই জাতীয় এবং সম্পৃক্ত নানান সমস্যা নিয়ে লেখা একটি সুচিন্তিত দার্শনিক বই। ফেমিনিজমের বিভিন্ন ইশুগুলি আজকের দিনে আমাদের প্রত্যেকের  জীবনকেই কম-বেশি স্পর্শ করে, এবং আরও অনেক কথাই আমাদের স্পষ্ট করে আলোচনা করা উচিৎ। লক্ষনীয় উপরে উল্লিখিত অক্সফোর্ডের দুই মহিলাই ( ডেইম হেলেন এবং মেরিলিন বাটলার) প্রধানত তাদের নিজেদের কেরিয়রের মতো অ্যাকাডেমিক কর্মজীবনের কথাই ভাবছিলেন। শ্রমজীবী শ্রেণির মেয়েরা কিন্তু বরাবরই ঘরে-বাইরে খেটেছে, তাদের জন্য মধ্যবিত্তদের তেমন মাথা ব্যাথা হয়নি। এবং এই সুযোগে বলি, আমি অনেকবারই ভেবেছি, আমি যে ঠিক কীভাবে স্নাতকোত্তর গবেষণা করেছিলাম তার খুটিনাটি দিয়েই একটি স্বতন্ত্র বই লেখা যায়। সে-সময়ে আমি আমার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়ে এমনই ব্যস্ত থাকতাম যে কোনো কোনোদিন রাতে শুতে যাবার আগে খেয়াল করতাম, সকালে ঘুম থেকে উঠে রাত্রিবাসের উপরে ড্রেসিং-গাউন জড়িয়ে নিয়ে যে অবস্থায় দিনের কাজ আরম্ভ করেছি দিনশেষেও সেই অবস্থাতেই আছি, সারা দিনেও বেশ বদলে শাড়ি পরে নেবার সময় হয়নি। সত্যি বলতে কি, সে সময়ে আমার সমস্ত দায়িত্বের মধ্যে গবেষণার কাজটাই ছিলো সব থেকে সহজ, কেননা যার রিসার্সে মন আছে তার কাছে রিসার্চ তো স্রেফ আনন্দ, প্রেমের শ্রম, অপরপক্ষে সন্তানপালন ও গৃহস্থালির খুঁটিনাটি আরও বিবিধ, বৈচিত্র্যপূর্ণ গুণাবলী দাবি করেঃ তাতে কেবল কায়িক পরিশ্রম লাগে না, লাগে অনেক মানসিক গুণ, স্থৈর্য এবং ধৈর্য থেকে নিমেষের মধ্যে জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে পারার মতো প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, জীবননৈপুণ্য, সামগ্রিক ‘ম্যানেজমেন্ট’। 

নারীমুক্তি সপক্ষে নানান ধারনাই আজকাল পৃথিবীর বিচ্ছিন্ন দেশে কম-বেশি চালু হয়েছে, — সম্প্রতি এই প্রবণতার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশে, বিশেষত মোল্লাতান্ত্রিক ইরানে,— কিন্তু সর্বত্রই এইসব ভাবনা-চিন্তার মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও ভুলভ্রান্তি  প্রচুর। 

একটি সুপ্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা এই যে সাম্য মানে জ্যামিতিক সাম্যঃ পুরুষ যেমন, নারীকেও অবিকল তেমনি হতে হবে।  যেন তারা সম্পূর্ণরূপে সমানধর্মা দু’টি ত্রিভুজ। নারী যেখানে পুরুষের থেকে আলাদা, সেই এলাকাটাকে একেবারের ভাজ করে মুড়ে গোপন করে ফেলতে হবে। কোনো মেয়ে যদি প্রসবের পরের দিন সকালেই ক্ষেতে হাজিরা দিয়ে ট্র্যাক্টর চালাতে পারেন তবেই তিনি আধুনিকা। 

এই ধারণার জের টেনে কারও কারও চোখ ঘরের বাইরে চাকরি করা এবং তার জন্যে মাইনে পাওয়াটাই হচ্ছে মুক্তির লক্ষণ। মেয়েদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নটা-পাচটার চাকরি করতে হবে, নয়তো তারা মুক্ত নারী হতে পারবে না। চাকুরীজীবী মানসতার সঙ্গে অর্থনীতিশাসিত বিভিন্ন শৈলীর মার্কসবাদী জীবন-ভাষ্যের মিলিত বিচিত্র ককটেলের প্রভাবে ‘আধুনিক’ বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের চোখে নারীমুক্তির প্রধান তাৎপর্য এইখানেইঃ চাকরি করায় আর মাইনে পাওয়ায়। যে-মেয়ে চাকরি করে না এবং মাইনে পায় না, তার জীবন অন্য নানা দিকে কর্মব্যস্ত, সমৃদ্ধ, পূর্ণ, সার্থক হলেও এই নব্য দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে সে ফেল্‌ ফেল্‌ ফেল্‌। 

এই প্রতিন্যাসের আরেকটি রকমফেরে মা হওয়াই এখনও নারীজীবনের চূড়ান্ত সার্থকতা বটে, কিন্তু তার একটি আধুনিক রূপ আছে। যেমন ধরা যাক, কোনো বাঙালি মেয়ে বাচ্চা নিয়ে বিধবা বা বিবাহবিচ্ছিন্না হয়েছে। সে যদি ঘরের বাইরে রোজগার করে এবং ঘরের ভিতরে ঝি-চাকর রেখে তার বাচ্চাদের ভরণপোষণ করতে পারে, তা হলে আজকের দিনে তার কপালে বিস্তর প্রশংসা অবশ্যই জুটবে, —’এমন লক্ষ্মী মেয়ে বড় চোখে পড়ে না’ — কিন্তু যে সে বলবে, ‘এবারে আরেকটা বিয়ে করা যাক, কেননা কেবল বাচ্চাদের মানুষ করে আর চাকরি করে আমার চরিতার্থতা হচ্ছে না, আমার একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সঙ্গী লাগবে’, অমনি আধুনিক মা-মাসীরা ব্যস্ত হয়ে এগিয়ে আসবেন, কেননা ১. ঐতিহ্যিক রীতিতে বাচ্চাদের বুকে জড়িয়ে ধরে এবং ২. আধুনিক রীতিতে চাকরি করে তার তো ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণভাবে মোক্ষলাভ হয়ে আছে, তার বাইরে অল্প কিছু আবার লক্ষ্মী মেয়েদের লাগে নাকি, ছিঃ?  

কোনো নারী সেই অন্যদের কথামতোন নৌকো না বেয়ে নিজের জীবনের কোনো ক্ষেত্রে স্বকীয় নির্বাচনকে, স্ব-তন্ত্রতাকে, আত্মবশতাকে খাটাতে যাবেন, তখনই তাকে নানাবিধ প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সাঁতরাতে হবে। নারীর মুক্তি কীভাবে সম্ভব এই বিষয়টিতে সংকীর্ণ একদেশদর্শী গৃহীত মত এবং রক্তচক্ষু অনুশাসনের অভাব নেই। 

মেরি মিজলি ও জুডিথ হিউজের ‘উইমেন’স চয়েসেজঃ ফিলসফিকাল প্রবলেমস ফেসিং ফেমিনিজম বইয়ের প্রচ্ছদ

জ্যামিতিক সাম্যের আদর্শ মেয়েদের কিছু-কিছু ক্ষতি করেছে। সন্তানপালন এবং সংসারধর্মের গুরুদায়িত্বগুলি অনেকাংশে  তাদের প্রাক্তন মর্যাদাগুলি হারিয়েছে। যেন প্রত্যেকটি মেয়েকে কোনো-না-কোনো প্রতিষ্ঠানে বেতনভুক্ত কর্মী করে ঢুকিয়ে দিয়ে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের পাশে একটি করে সরকারি ক্রেশ গড়ে দিলেই মেয়েদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক মেয়েদের দেখেছেন, তা হয় না। কয়েক দশক ধরে মেয়েদের প্রতিবাদের পর সোভিয়েত রাষ্ট্রেও এ ব্যাপারে নীতি পরিবর্তন লক্ষিত হচ্ছে, নীড়রচনার এবং গার্হস্থ্য জীবনের, মাতৃত্বের এবং শৈশবের দাবিদাওয়া মেনে নেবার একটা চেষ্টা চলেছে। যারা পুঁজিবাদী-বাণিজ্যিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ফরিয়াদী তাদের এটাও বুঝতে হবে যে তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাও রাষ্ট্রের স্বার্থে নাগরিকদের প্রোডাকশন লাইনের বলিতে পর্যবসিত করতে পারে। 

তর্কের ডামাডোলে আজকাল প্রায়ই একটি কেন্দ্রিক প্রশ্ন চাপা পড়ে যাচ্ছেঃ পরবর্তী প্রজন্মকে কারা গঠন করবে? কেবল দুধভাত খাওয়ানোর কথা ভাবছি না, কিংবা কেবল বর্ণমালা শেখানোর কথাও ভাবছি না, ভাবছি মানসিক গঠনের, চরিত্রগঠনের কথা। কারা শিশুদের ভালো-মন্দের ভেদ শেখাবে, তাদের মধ্যে জিজ্ঞাসা-শুভবুদ্ধি-নীতিবোধকে জাগ্রত করবে, আধুনিক পৃথিবীর সমস্যাগুলি সম্পর্কে তাদের অবহিত করবে? এ সমস্ত পুরো দায়িত্বই কি অর্পিত হবে ক্রেশ-কিন্ডারগার্টেন-বিদ্যালয় ইত্যাদি সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি উপরে? বাপ-মায়েরা কি অংশগ্রহণ করবে না? না করাটা কি কাম্য? যদি করে, তো করবে কখন? রোববার বিকেলে? অথচ এই দায়িত্ব কি আজকের পৃথিবীতে আগের দিনের চাইতে সূক্ষ্মতর, জটিলতর, ক্রমাগত আড়ও বেশি দাবিদার হয়ে উঠছে না? এ কাজে আমরা যে পরিমাণে ফাকি দেবো সেই পরিমাণেই প্রজাতির ভবিষ্যতকেও কি সংকটাপন্ন করে তুলবো না? 

এ কাজ কেবল মেয়েরাই করবে এমন কথা বলা হচ্ছে না, পুরুষদেরও যে যোগ দিতে হবে সেই ইঙ্গিতই দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু কর্মের একটা ক্ষেত্র, একটা মঞ্চ তো চাই। পারিবারিক নীড় নতুন ধরণের পিতাকে লালন করতে পারে; ক্রেশ-কিন্ডারগার্টেন পারে। তাই ফেমিনিজম কেবল মেয়েদের ইশু নয়, সকলের ইশু। এবং এর খুঁটিনাটি সকলেরই তলিয়ে দেখা উচিৎ, পর্যালোচনা করা উচিৎ। ঘড়ির কাটাকে প্রাক-ফেমিনিস্ট সময়ে আর ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। 

ফেমিনিজম আজকের আন্দোলন নয়। জন স্টুয়ার্ট মিল পৃথিবীর একজন উল্লেখযোগ্য ফেমিনিস্ট। এই চিন্তাধারা বর্তমান সময়ে কোন্‌ উপত্যকায় পৌছেছে, এই পৌছানোর তাৎপর্য কী, এখান থেকে পৃথিবীটাকে কেমন দেখাচ্ছে, এখন থেকে তাকে কী ধরণের জমি অতিক্রম করতে হবে, কী কী সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট হতে হবেঃ এইসব বিষয়ে ভারসাম্যযুক্ত আলোচনা যারা পড়তে চান তাদের মেরি মিজলি ও জুডিথ হিউজের বইটি পড়ে দেখতে অনুরোধ করি। এটি আজকের দিনের পরিপ্রেক্ষিত থেকে লেখা একটি সুমিত, বুদ্ধিপ্রোজ্জ্বল, বিশ্লেষণধর্মী বই। এটি পড়লে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন তারা যারা উনিশ আর বিশ শ্তকের ফেমিনিস্ট চিন্তার বিভিন্ন শাখা-উপশাখাগুলিকে কিছুটা অনুধাবন করেছেন, তার এযাবৎ বিবর্তনের সঙ্গে কিয়দংশে পরিচিত। ফেমিনিস্ট চিন্তায় মার্কসবাদী বিশ্লেষণপদ্ধতি কতটা স্বার্থক হয়েছে, মার্কসবাদের সঙ্গে তার সম্পর্কের চেহারা এখন থেকে কেমন হবে, সত্তরের দশকের ফেমিনিস্ট আন্দোলনের উৎক্ষিপ্ত তরঙ্গগুলির পর এই মুহূর্তে কী জাতের মূল্যায়ন ও বোঝাপড়ার প্রয়োজন, শ্রীমতি শুলামিথ ফায়ারস্টোনের (Shulamith Firestone, The Dialectic of Sex, 1970)। প্রবলভাবে মৌলিক প্রস্তাবসমূহের উত্তরাধিকারে আমরা শেষ পর্যন্ত কী পেলাম, ফেমিনিস্ট চিন্তায় চরমপন্থার কোনো অর্থ বা ভূমিকা থাকতে পারে কিনাঃ এই ধরণের নানান প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা এখানে পাওয়া যাবে। যুক্তিনিষ্ঠার সঙ্গে এখানে মিলিত হয়েছে মাত্রাজ্ঞান এবং একটি বিষয়কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারার ক্ষমতা; নেই কোন আতিশায্য বা কচকচানি বা অহেতুক পারিভাষিক শব্দের আমদানি। আমার ব্যক্তিগত রুচির পক্ষে বইটির রচনা-শৈলী একটু বেশি সাদামাঠা, সমতল; স্টাইলটা আরও উচ্চাবচ, আলোছায়াভরা হলে আমি আড়ও উপভোগ করতাম। কিন্তু এটা নিঃসন্দেহে একটা সাহিত্য সমালোচনা ঘেষা হলো; আলোচ্য প্রসঙ্গে এ অভিযোগ ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। 

লেখিকাদ্বয় চেষ্টা করেছেন নির্বাচনের বিভিন্ন মিথ্যা দ্বান্দ্বিকতা থেকে নারীর এবং সঙ্গে সঙ্গে  পুরুষের জীবনকেও উদ্ধার করতে। যে দ্বান্দ্বিকতাগুলির মুখোমুখি আমাদের বারে বারেই দাঁড় করানো হয় সেগুলি আবশ্যিক নয়, তাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। আপাতবিচ্ছিন্নদের নৈকট্যসাধনই, আপাতবিপরীতদের সমন্বয়সাধনই মনুষ্যধর্ম, উভয় লিঙ্গের পক্ষে। 

সে সাধনায় উভয় লিঙ্গই  যাতে উত্তীর্ণ হতে পারে তার জন্যে উপযুক্ত নির্ভরস্বরূপ সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়,  যদি নারী আর পুরুষ মিলিতভাবে চেষ্টা করে। তার জন্যে সর্বাগ্রে মুক্ত করতে হবে বুদ্ধিকে। বর্জন করতে হবে যোদ্ধৃসুলভ সেই চিন্তাভঙ্গিকে, যা জীবনের যাবতীয় জটিলতাকে সরলীকৃত করে নিয়ে প্রথমেই নির্দিষ্ট করে একটি শত্রুকে, তার পর তাকে বিনাশ করতে ঝাঁটার মতন এগিয়ে যায়, বিনা বাধায়, ‘ফরাসী-বিপ্লবী কায়দায়’। জীবনের সূক্ষ্ম সমস্যাগুলির সমাধান ওভাবে হয় না। তার জন্যে লাগে আর সংবেদন, আরও বহুমাত্রিক প্রতিন্যাস, সূক্ষ্মতর পরিকল্পনা এবং তার সযত্ন বাস্তবায়ন।  

জ্যামিতিক সাম্যের আদর্শের সীমাবদ্ধতাগুলি ধরিয়ে দিয়ে এরা দুজনে বলেনঃ দুই লিঙ্গের মধ্য কিছু কিছু পার্থক্য নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু পার্থক্য মানে এ নয় যে একটি অপরটির থেকে নিকৃষ্ট। যেগুলি তথাকথিত ‘মেয়েদের কাজ’  সেগুলি কোনো বিচারেই তথাকথিত পুরুষদের কাজের থেকে গুরুত্বে হীন নয়। আজকের মেয়েরা কী কী কাজ করবে, কীভাবে করবে, কীভাবে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে, এ সমস্তর মীমাংসা করতে হবে মেয়েদের জীবনেরই প্রয়োজন অনুসারে এবং সেই নীতি হবে লিঙ্গ নির্বিশেষে সব মানুষের শ্রমকে এবং তার মূল্যায়নকে আরও মনুষ্যোচিত করে তোলার বৃহত্তর প্রচেষ্টারই অন্তর্গত, কেননা কর্মজীবনের যে-মডেলটা পুরুষরা এ যাবত গড়ে তুলেছেন সেটা কোনো নিখুঁত মডেল নয়। (এই শেষ উদ্ধৃতিটিতে থেকে লেখিকাদের নিচু গলায় কথা বলার স্টাইলটা আশা করি খানিকটা বোঝা যাবে) সংক্ষেপেঃ 

… once we stop being obsessed with the ideas of treating men and women exactly alike, the immediate aim for women will be to make it possible for them to pass in and out of the child-bearing phase of life without either penalizing children or grotesquely interrupting and distorting women’s useful careers. 

এখানে উল্লেখ করি যে প্রজনন প্রক্রিয়ার উপরে মানুষের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা আজকাল এৎ দ্রুতগতিতে বাড়ছে যে সাধারণ মানুষ কেন, দার্শনিকরাও তার সঙ্গে তাল রাখতে পারছেন না। মিজলি ও হিউজের এই বইটি বার হবার পরে গত কয়েক মাসের মধ্যে বেশ কিছু বৈপ্লবিক খবরই বেরিয়েছে।  কাচপাত্রে সফল গর্ভাধানের এবং সেভাবে আহহিত প্রাণের নিরাপদ মানবজন্মের খবর এখন আর নতুন নয়, কিন্তু কিছু দিন আগেই পড়লাম এই প্রক্রিয়ায় আরেক ধাপ অগ্রগতির কথা। কাচপাত্রে  আরদ্ধজীবন ভ্রুণকে হিমপেটিকায় রাখা হয়েছে, তার পর থেকে বার ক্রে তার হিমত্ব ঘুচিয়ে তাকে মাতৃজরায়ুতে ঢোকানো হয়েছে, এবং সেই শিশু সুস্থদেহে জন্মলাভ করেছে। হিমসংরক্ষিত ভ্রুণকে ডিম্বদাত্রী মাতার জরায়ুতে না ঢুকিয়ে অন্য নারীর জরায়ুতেও ঢোকানো যায়। মানুষের ইতিহাসে এই প্রথম সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে একজন মেয়ে অপর কোনো মেয়ের ডিম্বজাত ভ্রুণকে নিজের গর্ভে ধারণ করতে পারে এবং যথাসময়ে সেই শিশুকে প্রসব করতে পারে। তেমন শিশু দুজন আ থাকবেঃ ডিম্বদাত্রী ‘জনয়িত্রী’ এবং গর্ভধারিনী প্রসূতি। বহু ভ্রুণ এখনই ত্রিশঙ্কুতুল্য অবস্থায় হিমপেটিকায় সুপ্তিমগ্ন এবং বিদ্যুতের সরবরাহে ঘাটতি না ঘটলে অনির্দিষ্টকাল ওভাবে থাকতে পারে। হয়তো আজকের ভ্রুণ জন্ম নেবে ভবিষ্যতের কোনো নারীর গর্ভে, যে নারী এখনো অজাতা। অর্থাৎ কিনা কোনো নারীর পক্ষে তার পিসীমাকে গর্ভে ধরা অসম্ভব হবে না। এইসব সম্ভাবনার তাৎপর্য ও পরিণাম নিশ্চয়ই যুগান্তকারী। এদিকে কাচপাত্রে আহিত প্রাণকে জরায়ুর বদলে কৃত্রিম কোনো আশ্রয়ে, টিস্যুর নীড়ে কত দিন বাঁচিয়ে রাখা যায়, বর্ধিত করা যায়, তা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এইসব গবেষণার নৈতিকতা নিয়ে সমাজপতিদের মাথাব্যাথাও বাড়ছে। কিন্তু গবেষণা পিছিয়ে নেই। 

সত্তরের দশকের গোড়ায় আমরা প্রথম যখন শুলামিথ ফায়ারস্টোনের ভবিষ্যৎ-কল্পনায় পড়েছিলাম যে ভবিষ্যতের শিশুরা নারীদেহের বাইরে জরায়ুর বিকল্প আশ্রয়ে লালিত হয়ে আমাদের অধুনা-পরিচিত জীবনের ছককে একেবারে পালটে দেবে, তখন সে চিন্তাকে ইউটোপিয়াই মনে হয়েছিলো অধিকাংশ পাঠকের; কিন্তু বস্তুত এখন অস্বীকার করা যায় না যে যদিও সেই ইউটোপিয়া এখনো পুরোপুরি এসে পৌছয়নি, তবু তার পদধ্বনি ক্রমশ এগিয়েই আসছে, পিছু হটে যাচ্ছে না। আজকের গরম-গরম ইশুগুলি তত দিনে ঠান্ডা  হয়ে যাবে, তখন মানুষের সামনে হাজির হবে কত নতুন নতুন ‘চয়েস’, কত নতুন ‘ডিলেমা’। 

[ নারীবাদের বিভিন্ন দার্শনিক দিক বিষয়ে প্রভাববিস্তারকারী বই মেরি মিজলি ও জুডিথ হিউজের ‘উইমেন’স চয়েসেজঃ ফিলসফিকাল প্রবলেমস ফেসিং ফেমিনিজম’। বর্তমান প্রবন্ধ ক্লাসিক বইটির পর্যালোচনা। সেমসেম-এ ক্লাসিক বইয়ের পরিচিতি ও সমালোচনামূলক ধারাবাহিক রচনার ধারাবাহিক প্রকাশ প্রকল্পের অংশ হিসেবে লেখাটি প্রকাশ করা হলো। বর্তমান লেখাটি নেওয়া হয়েছে তার ভাবনার ভাস্কর্য বইয়ের ১৯৮৭ সালের সংস্করণ থেকে। –সম্পাদক]

খাওয়ার বদলে ‘বাইরে খাওয়া’—বাঙালি মধ্যবিত্তের নতুন বন্দোবস্ত?

ম্যাচ শেষে আফগানিস্তান কোচ জনাথন ট্রট বলেন তার এই ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই, ‘আমার কোন ধারণা নেই। কখনো কি দুটি সুপার ওভার হয়েছে? আমি এটাই বলার চেষ্টা করেছি। এটা একদমই নতুন ব্যাপার। নিয়মগুলো আমরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করছি, জানছি।’

সিমু নাসের

সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক

'টুয়েলফথ ফেল'কে কেন্দ্র করে মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়েই এই লেখা। ভারত ও বাংলাদেশে 'টুয়েলফথ ফেল' সিনেমাটির জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হলো এর প্রেমকাহিনী।

খাওয়ার বদলে ‘বাইরে খাওয়া’—বাঙালি মধ্যবিত্তের নতুন বন্দোবস্ত?

নব্বই দশকের এক্কেবারে শুরুর দিক। হুট করে বাড়িতে ফুপা এসেছেন। যেমন-তেমন আসা না। বিদেশ থেকে এসেছেন, ঢাকায় একবেলা বিশ্রাম নিয়ে তারপর আস্তে-ধীরে বাড়িতে যাবেন। যেহেতু হুট করে আসা, বাসায় নেই কোনো প্রস্তুতি। ‘অগত্যা’ আনানো হলো নান্নার মোরগ-পোলাও। জামাই-মানুষ, তারপরও রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনানো হচ্ছে, বাসার মানুষদের মনে হচ্ছে খুবই কুণ্ঠিত। আমাদের ছোটোদের তাতে কী আসে যায়! বাসার মাঝে ‘হোটেলের খাবার’, নতুন ব্যাপার-স্যাপার! বহুদিন মুখে লেগে ছিল সেই মোরগ পোলাওয়ের স্বাদ।  

একই বাসা। সময়ের সাথে সাথে বদলেছে বাসার ‘মুরুব্বির আসন’। আবার এসেছে জামাই, সেটা আমার বোন-জামাই। সিদ্ধান্ত হলো, প্রায় প্রায়ই যেহেতু এখানে-সেখানে এটা-সেটা খাওয়ানো হয়, জামাইয়ের সম্মানে এবার ঘরে রান্না করা হবে। হলো রান্না। একেবারে আয়োজন করা রান্না—এখনকার সময়ে অনেকটা বিরল অভিজ্ঞতা! এই খাবারের স্বাদও মুখে লেগে রইল অনেকদিন।  

ওপরের উদাহরণটা নিছকই উদাহরণ, নিজের জীবন থেকে নেওয়া একটা উদাহরণ আরকি। কিন্তু এদেশের অন্তত শহরাঞ্চলে তাকালে দেখা যায়, এটা মোটেও আমার একার উদাহরণ না। গত কয়েক দশকে ঢাকার মধ্যবিত্ত সমাজের ‘বাইরে খাওয়া’ বিষয়টা ‘একেবারে না-পারতে’ বা ‘ঠ্যাকায় পড়ে খাওয়া’ থেকে হয়ে উঠেছে প্রাত্যাহিক বাস্তবতা। এটা এখন এমনই এক বাস্তব সত্য, যেটাকে যুক্তি-তর্ক দিয়ে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করার কিছু নেই। তারপরও বলি। বাংলাদেশের কুইক সার্ভিস রেস্তোরাঁ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে এই বাজারে আয় হয়েছে প্রায় ১৭৫৪ মিলিয়ন ডলার। ২০২৮ সালেই যা গিয়ে দাঁড়াবে ২৬৫৩ মিলিয়ন ডলারে। বুঝতে পারছেন ব্যাপার? ফুলেফেঁপে কলাগাছ পার হয়ে বটগাছ হয়ে যাওয়ার অবস্থা! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো দ্রুত পরিবর্তিত কর্মজীবন, বাড়ন্ত মধ্যবিত্ত আর খাবারের অনলাইন ডেলিভারি।

কিন্তু কেন বলছে বিশেষজ্ঞরা এমন? আসলেই কি যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দিয়ে ধরা যায় একে?
চলুন চেষ্টা করি। 

যুক্তি ১: সময় কখনও ‘নানের’ জন্য অপেক্ষা করে না 

আজকের শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনে মহামূল্য এক সম্পদ, তার নাম সময়। বিশেষ করে যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মজীবি, সেখানে বাসায় ফিরে রান্না-বান্না করার সময়ই কই; সেইসাথে মানসিক শক্তি আর আগ্রহই বা কই। আগে যেখানে স্কুল বা অফিস আর বিকালে টিভি দেখে, আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় টিভি দেখা ছিলো চক্রের মতো চলমান; এখনকার জীবনে কী যে হয়ে যাচ্ছে সেই তাল মেলানোই কঠিন! দ্রুতগামী, ব্যস্ত ও অনেকখানি বিশৃঙ্খল। 

কর্মব্যস্ত পরিবারে যদি বলা হয় ছুটির দিনটা বাইরেই খাওয়া যাক—এরচেয়ে খুশীর কথা আর নেই। অফিস শেষে জ্যাম ঠেলে বাড়ি এসে আবার বাজার করা, রান্না করা—এসবের বদলে ১৫ মিনিটে রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসে পড়া কী যে স্বস্তির! অনেকে আবার থাকেন ব্যাচেলর। একা বাসায় নিজের জন্য রান্না আর কতক্ষণ ভাল্লাগে—অন্তত বিকল্প যখন হাতের কাছেই আছে? তাই রেস্টুরেন্ট হয়ে উঠছে এক বিকল্প সংসার। সেই রেস্টুরেন্টের জানালার ছবি তুলেই মানুষ স্টোরিতে মিউজিক বসায়—আমার জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়।  

পাল্টা যুক্তি ১: ফুড ডেলিভারি অ্যাপেও তো সময় বাঁচে। তাহলে মানুষ রেস্টুরেন্টে যায় কেন? 

ভালো যুক্তি। ফুড ডেলিভারি অ্যাপ আছে। অ্যাপের ব্যবহারও আছে। বিশেষ করে ব্যস্ত অফিসের ফাঁকে টুক করে পছন্দের খাবারটা খেয়ে নিতে, কিংবা রেস্টুরেন্টে যাবার আলস্যি বা অসুবিধা থেকে বাঁচতে ঘরে বসেই অর্ডার করেন অনেকে। আছে বিভিন্ন হোম কিচেন, সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ। মানুষ সেখান থেকেও অর্ডার করছে। বিশেষ করে কোভিডের লকডাউনে এইসবই মানুষকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ দিয়েছিল ভালোভাবে। 

এই পাল্টা যুক্তির উত্তরও আবার আছে। খাওয়ার ব্যাপারটা এই সময়ে এসে আপনি শুধু উদরপূর্তি দিয়ে দেখলেই তো হবে না! রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়াটা একধরনের সামাজিকতা, মুড পরিবর্তন, সময় কাটানো। অনেক সময় ফ্লেক্স নেওয়াও। এই আউটিঙের স্বাদ ভাই আপনাকে ফুড ডেলিভারি দিতে পারবে না! হ্যাঁ, ফুড ডেলিভারিতে অর্ডার করে খাচ্ছে মানুষ। কিন্তু আরও বহু বহু মানুষ রেস্টুরেন্টে যাচ্ছে। ফেলে ছড়িয়ে খাচ্ছে, হাহাহিহি করছে, ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান দিচ্ছে—দেখো আমি একটা সুখের সময় কাটাচ্ছি, রেস্টুরেন্টে ভালোটা-মন্দটা খাচ্ছি। 

যুক্তি ২: রেস্টুরেন্টের ছাড়া বিনোদনের আর বিকল্প কোথায়? বিকল্প দেখানোর মানুষটাও তো এখন নাই! 

হ্যাঁ, মানুষ ছিলেন একজন আমাদের। তিনি আমাদের ডিমের বিকল্প দেখিয়েছেন, বেগুনের বিকল্প দেখিয়েছেন, মাংসের বিকল্প দেখিয়েছেন। ওই যে, কাঁঠালের বার্গার বানিয়ে খেতে বললেন। কিন্তু, মানুষটা চলে যাওয়ার পর কেউ আর আমাদের বিকল্প দেখায় না! ঢাকা শহরে বিনোদনের জন্য খুব অল্প পার্ক, আরও অল্প খেলার মাঠ। মানুষ দুদণ্ড বসবে কোথায়? আর যেখানে গিয়ে বসতে পারে, সে জায়গার নিরাপত্তা কোথায়? আর যে জায়গায় এগুলোও ম্যানেজ করা সম্ভব, তেমন জায়গায় এন্টারটেইনের সুযোগ কোথায়? হাতেগোনা লাইব্রেরি, ধীরে ধীরে কমতে থাকা সিনেমা হল, নাট্যমঞ্চ। নাটোরের বনলতা সেনও নেই, আর আপনিও জীবনানন্দ দাশ না যে কেউ আপনাকে দুদণ্ড শান্তি দেবে। তাহলে?

শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে, তারসাথে পাল্লা দিয়ে কমছে বিকল্প বিনোদনের জায়গাগুলো। আর, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেস্টুরেন্ট। সেটারও নানান রকমভেদ। কাজিনরা সব একসাথে হলে হইহই করে পুরান ঢাকায়, অফিসিয়াল মিটিঙে ধানমণ্ডির কোনো কফিশপ, বনানির কোনো রুফটপ রেস্টুরেন্ট। একান্তে নিজের মানুষটার সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে হয়তো পাঁচতারা হোটেলে বাই ওয়ান গেট ওয়ান কার্ড যোগাড় করে ব্যুফে! অথবা রাস্তার কোনো সস্তা হোটেলে বদ্ধ কেবিনে বন্দী দুজনে রুদ্ধশ্বাস কত অপেক্ষার! খাবার এখানে মুখ্য না, উপলক্ষ মাত্র। 

এমনকি রেস্টুরেন্টে জন্মদিন পালন, অফিসের ফেয়ারওয়েল, স্কুল-কলেজের রিইউনিয়ন, আর প্রপোজ করার ঘটনাও এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবার যেন পার্শ্বচরিত্র, প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ‘স্থান’।

পাল্টা যুক্তি ২: কিছু খোলা পার্ক, বইমেলা, কিংবা রবীন্দ্র সরোবরও তো আছে! 

আছে। সেইসাথে এখনকার সময়ের মধ্যবিত্তের ভিন্ন রকম চাহিদাও আছে। পার্কে বসে বাদাম ছিলতে ছিলতে ভাব-ভালোবাসার কথা বলতে ভালোই লাগে। একবার-দুবার, তারপর? তারপরই বসতে গেলে আপনার দরকার হবে মোবাইলে চার্জ দেওয়ার। একটা আরামদায়ক চেয়ার। ওয়াইফাই। সুযোগ থাকলে এসি। তারচেয়ে বড় জিনিস, প্রাইভেসি! এই জিনিস প্রতিটা মানুষ প্রাপ্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রেস্টুরেন্টেই ওটা এখন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। অন্তত অন্যান্য জায়গার মতো রেস্টুরেন্টে আপনি বা আপনারা প্রধান দ্রষ্টব্য না।

তারপর নিরাপত্তা, মশার হাত থেকে বাঁচা, কারেন্ট চলে গেলে জেনারেটর। ও ভালো কথা, রেস্টুরেন্টে কিন্তু খাবারও পাওয়া যায়। 

এই আধুনিক আরামগুলো নগরবাসী খোঁজে। তাই সে উপভোগ করতে বের হতে চাইলে প্রথমে এটা সেটা বিকল্প হাতড়ায়, তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে তাকেই বলতে শোনা যায়, এই জানিস, অমুক রেস্টুরেন্টের ফিশ বার্গারটা কিন্তু দুর্দান্ত। অ্যাম্বিয়েন্সটাও ইনস্টা ফ্রেন্ডলি। চলে আয় ৫টায়। আড্ডা হবে। 

যুক্তি ৩: সামাজিক স্ট্যাটাস ও মিডিয়া প্রভাব—‘রেস্টুরেন্ট কালচার’ এখন একধরনের স্বীকৃতি

খাবার কী খাচ্ছেন, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে খাচ্ছেন—খাবার নিয়ে একটা পুরানো দর্শন। এই দর্শনই এখনকার বিশ্বে অনেকটা আপ্তবাক্য হয়ে উঠেছে। আর আপনি কীভাবে খাচ্ছেন, কোন পরিবেশে খাচ্ছেন, সেটা দেখাতে এই সোশ্যাল মিডিয়ার জমজমাট সময়টাই তো মোক্ষম!  ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের কল্যাণে খাবার এখন শুধু খাওয়ার বস্তু নয়—এটা দেখানোর, উপস্থাপনের ও ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। কফিশপে বসে ‘সিনামন লাতে’ খাওয়ার ছবি, কোনো নতুন ফিউশন রেস্টুরেন্টে গিয়ে ওপেন কিচেনের ভিডিও—এসব এখন একধরনের ‘লাইফস্টাইল স্টেটমেন্ট’। উঁহু, নাক বেঁকিয়ে লাভ নেই, ওটা আপনিও করেন। হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি/ভিডিও/টেক্সট দেন, অথবা দেখেন, অথবা দুটাই করেন। রান্নার মতোই গুরুত্বপূর্ণ এখন ‘রিভিউ করা’, ‘ভ্লগ বানানো’, ‘রেটিং দেওয়া’ । ভোজনরসিকতা এখন শুধু রসনা তৃপ্তি না, সামাজিক পুঁজি অর্জনের পথও বলা চলে।

এই অংশে আরও বলা দরকার—খাদ্যসংস্কৃতির এ যে পরিবর্তনটা ঘটছে, তার মধ্য দিয়ে এখন শ্রেণি, রুচি, ও চিন্তার নতুন ‘সাংস্কৃতিক মানচিত্র’ তৈরি হচ্ছে। বনানীর রুফটপ রেস্টুরেন্ট আর মোহাম্মদপুরের পারিবারিক খাবারের দোকান—দুটার ভিজ্যুয়াল ও ভাষা আলাদা। ফলে এই রেস্টুরেন্ট কালচার শ্রেণি-ভিত্তিক সংস্কৃতি গঠনের মাধ্যমেও পরিণত হয়েছে।

পাল্টা যুক্তি ৩: আমরা কী খাচ্ছি—সেটা কি এখন গৌণ হয়ে উঠেছে?

এই প্রবণতার ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক বিপন্নতা। খাবার এখন কেবল দেখার বিষয় হয়ে গেছে। স্বাদের, পুষ্টির বা ইতিহাসের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ‘প্রেজেন্টেশন’। বুমারসের চাইনিজ প্ল্যাটার নাকি লায়লাতির চাইনিজ প্ল্যাটার—কোনটা ইনস্টাগ্রামে ফটোজেনিক, সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখ্য ।

সত্যি বলতে, এই প্রবণতা একধরনের বিকৃতি তৈরি করছে। তবে এটাও মানতে হবে, খাবার কেবল পুষ্টি বা স্বাদের বিষয় নয়—এটাও একধরনের গল্প বলার উপায়। রেস্তোরাঁয় খাওয়ার মাধ্যমে অনেকে নিজেদের অভিব্যক্তি, রুচি এবং চিন্তার পরিচয় দিতে চায়। তাতে কোনো সমস্যা নেই, তবে স্বাদের, শিকড়ের আর অর্থপূর্ণ সামাজিকতার জায়গাটা যেন থাকে।

যুক্তি ৪: মধ্যবিত্তের পকেট ফ্রেন্ডলি বিলাস 

একসময় রেস্টুরেন্ট মানেই বিলাসিতা। এখন সেটাই অনেক মধ্যবিত্তের জন্য ‘সাশ্রয়ী বিলাস’। এক কাপ কফি কিংবা ২০০ টাকার একটি বিরিয়ানি প্লেট দিয়ে আপনি নিজেকে একটু ‘পুরস্কৃত’ করতেই পারেন। ভ্রমণ বা বড় বিনোদনের সুযোগ যেখানে সীমিত, সেখানে এই ছোটো খরচেই অনেক মানুষ আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে।

শহুরে ক্লান্তি, কাজের চাপ, পারিবারিক সংকট—সবকিছু থেকে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া যায় এই খাবার-কেন্দ্রিক সামাজিকতায়। অন্য মানুষের কথা কী বলবো, আমিই তো ঠিক করে রেখেছি এই লেখাটা শেষ করে এক প্লেট ঝাল দেওয়া ভেলপুরি খাব। একটা ‘মাইক্রো রিওয়ার্ড’ না পেলে কি চলে?

অনেকে একা যান, অনেকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে যান। যান অনেকেই। রেস্তোরাঁ আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছে একধরনের মানসিক আশ্রয়।

খাবার কী খাচ্ছেন, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে খাচ্ছেন—খাবার নিয়ে একটা পুরানো দর্শন। এই দর্শনই এখনকার বিশ্বে অনেকটা আপ্তবাক্য হয়ে উঠেছে। অলঙ্করণ করেছেন সামিউল

পাল্টা যুক্তি ৪: এই ‘সস্তা বিলাসিতা’র জন্য কি আমরা হারাচ্ছি দীর্ঘমেয়াদে আত্মনির্ভরতা?

খাবার নিজে রান্না করা, নিজস্ব খাদ্য সংস্কৃতি বজায় রাখা একধরনের আত্মপরিচয়ের অংশ। যখন পরিবার নিজেরা রান্না করা বন্ধ করে দেয়, তখন খাবারের মধ্যে থাকা পারিবারিক বন্ধনও হারিয়ে যেতে পারে।

এ নিয়ে অবশ্যই ভাবা দরকার। তবে প্রতিদিনের একঘেয়েমি ও চাপ থেকে স্বস্তি পেতে যদি রেস্তোরাঁয় যাওয়া হয়, তা হলে সেটাকে পুরোপুরি নেতিবাচক না বলে, তা ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। হ্যাঁ, সচেতনতা জরুরি—কোথায় থামতে হবে, সেটাও জানতে হবে।

যুক্তি ৫: শ্রেণি-নির্ভর রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি—নতুন সামাজিক বিভাজন?

শহরের রেস্তোরাঁ সংস্কৃতির প্রসার নতুন এক সাংস্কৃতিক শ্রেণি তৈরি করেছে। দামি রুফটপ ক্যাফে, ফিউশন রেস্টুরেন্টে যাওয়া এখন নিম্নমধ্যবিত্ত বা শ্রমজীবী মানুষের জন্য দুর্লভ। যার কারণে এই রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি একধরনের সামাজিক বিভাজনেরও প্রতীক হয়ে উঠছে—যেখানে কিছু মানুষ শুধু ফেসবুক ছবির মাধ্যমে এই জীবনযাপনকে চেনে।

পাল্টা যুক্তি ৫: নতুন উদ্যোক্তা, ফুড কার্ট, লোকাল খাবার—এই বিভাজন কি কাটিয়ে উঠছে?

হ্যাঁ, ফুড কার্ট, লোকাল ফুড আর নতুন উদ্যোক্তাদের কারণে এই ফাঁকও কিছুটা কমছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তরুণ উদ্যোক্তা বা এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেই এখন এমন অনেক হোম-বেইজড ফুড বিজনেস গড়ে উঠছে যারা তুলনামূলক কম দামে বৈচিত্র্যময় খাবার পরিবেশন করছে। ফলে একধরনের ইনক্লুসিভিটির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ব্যাপারটা আমাদের মনোযোগ দাবি করে—খাদ্য যদি আত্মপ্রকাশ হয়, তবে তা যেন কেবল এক শ্রেণির একচেটিয়া না হয়। শহুরে খাদ্যচর্চায় একইসাথে ইনক্লুসিভিটি রাখা আর বহুমাত্রিক হওয়া খুবই প্রয়োজন। 

এতসব যুক্তিতে তাহলে কী দাঁড়াল? 

বলতে গেলে কিছু দাঁড়ায় নাই। কোনো কিছু দাঁড় করানো এই লেখার উদ্দেশ্যও না আসলে। এই সময়ে ‘বাইরে খাওয়ার’ দৃশ্যপটটা কথায় কথায় একটু সামনে নিয়ে আসা আরকি।

বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্তের বাইরে খাওয়ার প্রবণতা নিয়ে যারা নাক উঁচু করেন, তারা প্রায়ই একটা আদর্শ বাঙালি পরিবার কল্পনা করেন—যেখানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সবাই একসঙ্গে খায়, মা রাঁধেন, বাবার পছন্দের তরকারি হয়, এবং সন্তানরা ‘বাসার খাবারেই তৃপ্ত’ থাকে। এই কল্পনা এই সময়ে এসে যতটা না বাস্তব, তার চেয়ে বেশি এক ধরনের আদর্শিক নস্টালজিয়া।

বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্তের রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভ্যাস তাই এখন আর শুধু খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন না, একটা বিস্তৃত জীবনচর্চার অংশ। এটাকে বলা যায় সময়ের ব্যবস্থাপনা, সামাজিক অবস্থানের প্রকাশ, বিনোদনের ঘাটতির প্রতিক্রিয়া আর একধরনের মানসিক মুক্তির খোঁজ।

শহরে যদি বিকল্প সাংস্কৃতিক পরিসর, নিরাপদ উন্মুক্ত স্থান ও সাশ্রয়ী বিনোদনের ব্যবস্থা বাড়ানো যায়, তাহলে মানুষ রেস্তোরাঁকে একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে নির্ভর করা কমিয়ে দেবে—এটা বলতে সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না। কিন্তু তার আগে আমাদের স্বীকার করতে হবে—রেস্তোরাঁ এখন আর শুধু খাওয়ার জায়গাই না। এটা হয়ে উঠেছে জীবনযাপন, আত্মপ্রকাশ ও আধুনিক শহুরে বাস্তবতার প্রতীকও।

আমাদের প্রয়োজন এই পরিবর্তনের গভীরে যাওয়া—তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বুঝে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার অভ্যাসকে আরও অর্থবহ, ভারসাম্যপূর্ণ আর সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করা। এই আরকি।