কে না চায় মনে মনে স্বৈরাচারী হতে? দেশজুড়ে নিজের জয়জয়কার, পাবলিকের টাকায় বাড়ি-গাড়ি, অপছন্দের লোকজনকে হাপিশ করে দেয়া—আহা! কে না চায়?
কিন্তু দুঃসংবাদ হলো এই চাওয়া এ যুগের সঙ্গে একটু বেমানান। মানুষজন ইদানিং বেশিই সেন্সিটিভ। মানবাধিকারে একটু টোকা পড়লেই ছ্যাঁত করে ওঠে। তাদেরকে নাকি গুম করা যাবে না, তাদের টাকায় বিদেশে বাড়ি করা যাবে না, বিচারব্যবস্থা স্বচ্ছ রাখতে হবে। শখ কত! আহা, ‘কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’ যখন একজন স্বৈরাচারী শান্তিতে পুরা দেশটাকে নিজের বাপের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি ও দেশের জনগণকে নিজের দাসানুদাসের মত ব্যবহার করতে পারতো? প্যারা নাই, এখনো আছে সেই দিন। শুধু আরেকটু কৌশলী হতে হবে আরকি। স্বৈরাচারকে চিনির প্রলেপ দিয়ে খাওয়াতে হবে মানুষকে। সেটি কীভাবে করবেন? আপনার জন্যই এখানে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো একজন সফল স্বৈরাচারী হওয়ার কলাকৌশল।
ক্ষমতায় আসবেন কীভাবে?
স্বৈরাচারী হওয়ার মানে হলো খাদ্যশৃঙ্খলের সবচেয়ে উপরে অবস্থান করা। ক্ষমতার আদ্যপান্ত আপনাতেই শুরু এবং শেষ। আপনি হয়তো ভাবছেন কঠোর পরিশ্রম ও একান্ত নিষ্ঠার মাধ্যমেই সে পর্যায়ে পৌঁছনো সম্ভব। কিন্তু, না। জীবন একটা পাতানো খেলা। এ খেলায় নিয়ম হলো শুরুতেই জিতে বসে থাকতে হবে। সুতরাং, সবচেয়ে ভালো হয় যদি ক্ষমতা বাপ-দাদার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যায়। অথবা ধরুন বাপ যদি হয় দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন নায়ক, তাহলে তো সোনায় সোহাগা! তখন তো দেশের উপর আপনার হক স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি; জনগণ-টনগণ পরে। অবশ্য আপনি দুর্ভাগা হলে, অন্য উপায় খুঁজতে হবে। ঢুকে পড়ুন কোনো একটি রাজনৈতিক দলে। ঝোপ বুঝে কোপ মারুন ও ধীরে ধীরে ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে শীর্ষে উঠে যান এবং হাসিল করুন নিজের উদ্দেশ্য। স্বৈরাচারীদের ওস্তাদ অ্যাডলফ হিটলার কিন্তু ১৯১৯ সালে জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে ঢোকেন। একবার এক সভায় দলপ্রধানের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজের বাগ্মিতার প্রমাণ দেন হিটলার ভরা মজলিসে। এরপর থেকে আস্তে আস্তে এই দলকে পরিণত করেন নাৎসি পার্টিতে। হিটলারের কাছ থেকে অনেককিছু শেখার আছে আপনার। আরো ভালো হয়, যদি কোনোভাবে একবার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারেন। তাহলে সেটা আপনার ভবিষ্যতের সকল স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডকে জায়েজ করতে সাহায্য করবে, আবার আন্তর্জাতিক মহল থেকেও চাপ খাবেন কম। আর একবার ক্ষমতায় চলে আসার পর পরবর্তী নির্বাচনসমূহ হাতিয়ে নেয়া কঠিন কিছু না। তা না হলে, জনগণের কোনো বিপ্লবকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগান, হাইজ্যাক করে নিন। সেটাকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় চলে আসুন। আলা বাদিউর ‘বিবাহ যেভাবে প্রতিবার প্রেমের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, একটা রাষ্ট্রও প্রতিবার যেই আদর্শিক আন্দোলনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সাথে প্রতারণা করে’-এই উক্তিটাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিন। গুডলাক।
আপনিই সর্বেসর্বা!
মনে রাখবেন, আপনিই সব। ত্রাতা, দাতা, নবাবজাদা সবই আপনি। দেশ ও জাতির সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু যেন আপনিই হন। তা না হলে আপনার স্বপ্নের সর্বাত্মকবাদী রাষ্ট্র কায়েম হবে না। আগেকার দিনে তো শাসককে খোদ ঈশ্বরের বংশধর বলে মেনে নেয়াই হতো। এখন আর সেই সুবর্ণ দিন নাই। ফলে এখন আপনারই নিজ দায়িত্বে মানুষকে বোঝাতে হবে যে আপনিই তাদের অধীশ্বর; গড়ে তুলতে হবে নিজের কাল্ট অফ পার্সোনালিটি। এর জন্য প্রথমেই নিজেকে কোনো এক আদর্শ বা চেতনার সাথে একাত্ম করে ফেলতে হবে, যাতে আপনার বিরুদ্ধে যাওয়া মানেই সেই আদর্শের বিরুদ্ধে যাওয়া বলে সাব্যস্ত করা যায়।
আপনি আর ব্যক্তি থাকবেন না, নিজেই হয়ে উঠবেন সেই চেতনার মূর্তরূপ। তারপর, সম্ভব হলে নিজের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে জাতির কোনো পুরানো হিরোর। অগাস্টাস সিজার যেমন নিজের পালক-পিতা জুলিয়াসের খ্যাতি বেচে নিজের উত্থান নিশ্চিত করেছিল। এই সহজ কৌশলটা এখনো কার্যকর। বিশেষ করে সেই হিরো যদি হয় আপনারই বাপ-মা বা স্বামী, তাহলে তো আরো ভালো। এরপর শুরু করবেন আসল কাজ। সকল নোটে আপনার, বা আপনার সেই বাপ-দাদার ছবি থাকতে হবে। রাস্তাঘাটে, প্রতিটা চত্বরে, ময়দানে থাকবে ভাস্কর্য, সকল অফিস-আদালতে আপনাদের ছবি টাঙিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক হবে। পদে পদে জনতাকে মনে করিয়ে দিতে হবে দেশটা কার। এবং আপনি যে সর্বগুণে গুণান্বিত তা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য মোসাহেবরা যেন আপনার নামের আগে কয়েকশ বিশেষণ যোগ করে নেয় তা অবশ্যই নিশ্চিত করবেন। কিম ইল সুং পরিচিত ছিলেন ‘দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, চিরজয়ী সেনাপতি , ‘মহান সূর্য ও মহৎ মানব’, ‘মহান নেতা’, ‘মহান পিতা’, ‘জাতির সূর্য, ‘দূরদর্শী, ‘জাতির বিবেকের পরাকাষ্ঠা’, ‘অদ্বিতীয় দেশপ্রেমিক’, ‘জাতীয় বীর’, ‘আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক’ ইত্যাদি অভিধায়। আমাদের দেশেও এমন নজির বিরল নয়। তবে মানুষ অবশ্যই জানবে আপনি এসব চান না। এসব আপনার ভক্তকূল তথা দেশের জনগণই চায়, কারণ তারা আপনাকে ভালোবাসে। তুর্কমেনিস্তানের সাপারমুরাত নিয়াযভের মত আপনাকে বলতে হবে, ‘রাস্তাঘাটে নিজের ছবি ও ভাস্কর্য দেখতে আমার ভালো লাগে না, কিন্তু জনগণ তাই চায়।’
ভ্রম বজায় রাখুন
যেমনটা বললাম, মানুষ এখন আর স্বৈরাচারের কদর করে না। গণতন্ত্রে কি এক মধু যেন পেয়ে গেছে তারা! ফলে আপনার স্বৈরাচারটাকে পাতলা ঘোমটার আড়ালে রাখা গেলেই ভালো। দেশে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার ভ্রমটুকু অন্তত বজায় রাখতে হবে। তাই বলে লাগাম ছেড়ে দেয়া যাবে না। কেউ বাকস্বাধীনতার নামে আপনার আসনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বসবে, বা বাজেট নিয়ে সমালোচনা করবে তা তো হতে পারে না। বাকস্বাধীনতা মানে তো স্বৈরাচারানুভূতিতে আঘাত দেয়া নয়, তাইনা? এমন কোথাও হতে দেখলে তা দমন করা আপনার দায়িত্ব। কিন্তু তাই বলে যেন দেশে নীরবতা বিরাজ না করে তাও খেয়াল রাখবেন। স্লাভোয় জিজেকের একটা টোটকা মনে রাখবেন: ‘স্তালিনের আমলে যদি কেউ জনসমক্ষে স্তালিনের সাথে দ্বিমত করে বসে, আর দ্বিতীয় কেউ যদি চিৎকার করে উঠে তাকে থামিয়ে দেয়, তাহলে প্রথমজনের আগে গুম হবেন দ্বিতীয়জন। কেননা সে বাকস্বাধীনতার যে ভুয়া পর্দা, তাতে আঘাত হেনেছে।’

বাকস্বাধীনতা না থাকলেও তার ভ্রম বজায় থাকতে হবে সর্বদা। নীরবতা হতে পারে উস্কানিমূলক, জায়গা তৈরি করে দিতে পারে আরো ভয়াবহ সব প্রশ্ন ও সন্দেহের। তাই বাকোয়াজি কোলাহল দিয়ে ভরে রাখবেন মানুষের মন। ইন্টারনেটের কল্যাণে তা এমনিতেও খুব সহজ। এখানে সবকিছুই হাজির হয় ‘ইস্যু’ আকারে। তুচ্ছ থেকে বিরাট সকল ঘটনার ব্যাপারে সমান গুরুত্ব দিয়ে মতামত দাঁড় করানোর প্রয়োজন বোধ করবে লোকে। পেপারে ছাপতে থাকুন নায়িকাদের প্রিয় ফলের খবর, টিভি টকশোতে যেন তুমুল তর্ক চলতে থাকে অপ্রাসঙ্গিক সব বিষয়ে। উমবের্তো একো’র মতে, সেন্সরশিপের ক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব মানুষের কথাকে নীরব করেই দেয়াই না, বরং তাকে অহেতুক কোলাহল দিয়ে প্রতিস্থাপিত করাও।

কিছু বিষয়ে ছাড় দিতে হবে, এমনকি সহযোগিতাও করতে হবে। আসল বিষয়গুলিতে কেউ হাত না দিলেই হলো। আশা করা যায় এই খর্বিত স্বাধীনতা উপভোগ করতে করতে একসময় মানুষ ভুলে যাবে আদতে স্বাধীনতা কী। জনগণ জানবে তারাই ক্ষমতায়। মাঝে-মাঝে বলবেন, ‘আপনারা না চাইলে আমি আর নেতৃত্বে থাকব না।’ ইকুয়েটরিয়াল নিউ গিনি’র তিওডোরো ওবিয়াং নগুয়েমা টানা ৩২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ঘোষণা দিলেন, ‘যেদিন আপনারা আমার উপর বিরক্ত হয়ে যাবেন, সেদিন আমি পদত্যাগ করে চলে যাব।’ এতদিনে বোধহয় ওই দেশের লোকেরা বিরক্ত হতেও ভুলে গেছিল। গণতন্ত্র কী? স্রেফ একটা শব্দই তো। তাকে নিজের মত সংজ্ঞায়িত করে নেয়াই যায়।
বিদ্রোহ দমন
সাবধান হন। ন্যূনতম বিরোধীস্বরকেও হাল্কা করে নেবেন না। অবাধ্যতা সংক্রামক। আজকে যে ১০-১২জন ছোকড়া রাস্তার এক চিপায় কয়েকটা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কালকেই দেখা যাবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে সংখ্যা বাড়তে বাড়তে শত, তারপর হাজার, এমনকি লাখ ছাড়িয়েছে। ফলে এইসব বিদ্রোহের বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার আগেই নষ্ট করা দরকার। আরো ভালো হয় যদি সেই বীজ রোপনই না করা যায়, সে ব্যবস্থা করা। মানুষে-মানুষে স্বাভাবিক সংযোগ ও সম্পর্ক কঠিন করে তুলতে হবে। মাঠ, পার্ক, লাইব্রেরি ইত্যাদি গায়েব করে ফেলুন। সবখানে থাকবে শুধু বিরাট বিরাট স্থাপত্য। আলাপ-আলোচনা, পাঠচক্র এসব আয়োজনের পথ যতটা সম্ভব কঠিন করে তুলুন। মানুষ যদি মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগই না পায়, চিন্তার লেনদেনই না করতে পারে, তাহলে বিদ্রোহের সম্ভাবনা শুরুতেই নস্যাৎ হয়। যেমন ধরুন, জিম্বাবুয়ের নাগরিকদের কাছে আরব বসন্তের ঘটনাক্রম স্বাভাবিকভাবেই বেশ অনুপ্রেরণাদায়ক মনে হয়েছিল, ফলে তারা আরব বসন্ত থেকে কী কী শেখা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য একত্র হতে গেলে রবার্ট মুগাবে সেখানকার উদ্যোক্তাদের রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করেন। বাংলাদেশে কিছুদিন আগেই ২০২২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে গ্রেফতার করা হয়। খাদিজা ফেসবুকে একটি ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন, যেখানে একজন বক্তা ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রবাসী হওয়ায় তার বদলে গ্রেফতার করা হয় খাদিজাকে। এনআইডি কার্ডে তখন তার বয়স ১৭।
অথবা বেছে নিতে পারেন জনতুষ্টির পথ। জনগণকে যে আপনি খুব পাত্তা দেন তা তো না। কিন্তু তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, ফলে তাদের খুব বেশি খ্যাপানোও ঠিক হবে না। যেনতেনভাবে সন্তুষ্ট রাখতেই হবে। অগাস্টাস সিজার সৈন্যদের নানানরকম উপহার দিয়ে বাগে এনেছিল, সাধারণ জনগণকে দিয়েছিল সস্তার ভুট্টা ও বিশ্রামের সময়। ফলে কেউ খেয়ালও করেনি যে এসবের ফাঁকে সে সেনেট, প্রশাসন, বিচার-বিভাগ সব নিজের পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে নিচ্ছে। জনগণের নজর সরিয়ে রাখার উপায় অনেক আছে। খেলাধুলা, বিনোদন মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগান। মুসোলিনির সময় খেলোয়াড়রা ছিল ইতালীয় পৌরুষের প্রতীক। নিজেদের ব্যক্তিত্ব ও কাজের মাধ্যমে মুসোলিনির শাসনের প্রতি জনগণের সম্মতি উৎপাদন করে চলেছিল তারা। আফ্রিকান দেশ যাঈয়ে-তে যখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। তখন মোবুতু প্রচুর পরিমাণে পয়সা খরচ করে মুহাম্মদ আলী আর জর্জ ফোরম্যানকে নিয়ে আসেন দেশে বক্সিং খেলার জন্য। অর্থাৎ জুভেনালের পরামর্শ অনুযায়ী, রুটি ও সার্কাস দিয়ে ব্যস্ত রাখতে হবে মানুষকে। আশা করা যায় তাহলেই তারা শান্ত থাকবে।

তবুও যদি কোনোভাবে তারা একত্র হতে শুরু করে, আপনার জন্য ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন নিরুপায় হয়ে কঠোর হতেই হবে। স্বৈরাচারীর প্রকৃষ্ট বন্ধু ম্যাকিয়াভেলি বলে গেছেন, ‘জনগণের কাছ থেকে ভালোবাসা ও ভয় দুটো একইসাথে আদায় করা যেহেতু কঠিন, ফলে শাসকের জন্য জনগণের ভয়ই উত্তম।’ তবে তাই হোক— কায়েম হোক ভয়ের শাসন। আন্দোলনকারীদেরকে দাগিয়ে দিন অপরাধী হিসেবে। এমন কোনো একটা তকমা দিয়ে দিতে পারেন যার বরাতে তাদের মানবাধিকার নাই করে দেওয়া জায়েজ হয়ে যায়। বলে দেন তারা স্বাধীনতাবিরোধী বা রাজাকার কিংবা টেরোরিস্ট। বেশিরভাগ সময় এসব তকমা বিরোধীমতের লোকদেরকে দেশের উপর কম হকদার প্রতিপন্ন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আপনার বিরোধিতা করা মানে তো আসলে দেশেরই বিরোধিতা করা। তারপর সবলে দমন করুন। নেতাগুলোকে আগে জেলে ভরুন। আন্দোলনকারীদের মেরে ফেলুন, গ্রেফতার করুন, গুম করুন। এদিকে ফাঁকতালে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, সাংবাদিকরা যারা আপনার শাসনামলে শনপাপড়ি খেয়ে আসছে তাদের ডেকে নিন, বোঝান যেন তারা কো-অপারেট করে, কারণ আপনি না থাকলে তাদেরও খবর আছে। এদের সহযোগিতায় চালাইদেন যে এরা বিরোধীদলের, বা কোনো জঙ্গীগোষ্ঠীর মদদপুষ্ট। তদন্তের মাধ্যমে অপরাধী শনাক্ত করা অনেক সেকেলে। আগে অপরাধী শনাক্ত করে তক্তা বানান, তদন্ত তার পরে।
এইতো! এই কাজগুলো ঠিকঠাক করতে পারলে আশা করা যায় আপনি হয়ে উঠবেন একজন সফল স্বৈরাচারী। পুরো দেশ থাকবে আপনার হাতের মুঠায়। লেখাটি যদি আপনার কাজে লাগে, ও কখনো যদি ক্ষমতায় চলে আসতে পারেন, তাহলে আশা করি আমাদেরকে আপনার সুনজরে রাখবেন।
[ সম্পাদকের নোটঃ বিগত দুই দশকে ডিক্টেটরশিপ ও ফ্যাসিবাদ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে অনেকগুলো বই। একাডেমিক বই যেমন আছে, আছে সাধারণ পাঠকদেরকে উদ্দেশ্য করে রচিত ননফিকশনও। কার্মাইন ডেলুকা ও র্যান্ডাল উড রচিত ‘দ্য ডিক্টেটর্স হ্যান্ডবুকঃ আ প্র্যাক্টিকেল ম্যানুয়াল ফর দি এ্যাস্পায়ারিং টাইরেন্ট’ ধারার বই যেখানে স্বৈরাচারের কর্মপদ্ধতি আলোচিত হয়েছে ‘হাউ টু’ ঢঙে। বর্তমান লেখাটি বইটির স্যাটায়ারিকাল রিভিউ হলেও হাউ টু ভঙ্গিতে স্বৈরাচারের কর্মপদ্ধতি ও স্বৈরাচারশাসিত সমাজের নানান দিকও তুলে ধরেছে ]