WhatsApp Image 2024-09-19 at 12.36.18
মাহীন হক
লেখক ও অনুবাদক


মিরেই গুইলিয়ানো পাতলা গড়নের সফল এক নারী। তার জন্ম ফ্রান্সে আর জাতিসঙ্ঘের হয়ে দোভাষী হিসেবে কাজ করার আগে তিনি প্যারিস থেকে পড়াশুনা শেষ করেন। তারপর কিছুদিন তিনি শ্যাম্পেনের ব্যবসায় ছিলেন। ১৯৮৪ সালে যোগদান করেন ভ্যুভ ক্লিকো’তে, যার কাজকর্ম সেসময় মোটেই খুব একটা আকর্ষণীয় ছিল না। কিন্তু তার সাহায্যে কোম্পানিটা উন্নতি লাভ করতে থাকে এবং একসময় আমেরিকায় একটা শাখাও খুলতে সক্ষম হয়। ১৯৯১ সালে তিনি এই কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর পদ গ্রহণ করেন ও ভীষণ সফলতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করেন। ডাউনটাউন ম্যানহ্যাটানের দিক মুখ করা অ্যাপার্টমেন্টে বসে তিনি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে ঠাট্টা করে বলেন, ‘জানেনই তো আমি পানি কতটা ভালোবাসি।’ ঠিকই। ‘ফরাসি কায়দায়’ ওজন কমানোর ও পাতলা থাকার ব্যাপারে তার বেস্টসেলিং ফ্রেঞ্চ উইমেন ডোন্ট গেট ফ্যাট বইটাতে প্রধান বিধান হলো প্রচুর পানি খাওয়া।      

বইতে তিনি কিশোরী বয়সের নিজের অস্বস্তির কথা লেখেন। সেসময় গ্রীষ্মকালের ছুটি কাটাতে আমেরিকায় থাকাকালীন তার ওজন বেড়ে যায়। এই অস্বস্তি আরো বেড়ে যায় যখন আমেরিকা থেকে ফ্রান্সে ফেরার পর তার বাবা ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরার বদলে, বলে ওঠেন তাকে দেখতে ‘একটা আলুর বস্তার মত লাগছে।’ এরপর তিনি নিজের খাদ্যাভ্যাস পুরোপুরি বদলে ফেলেন, নিজের পুরনো ফরাসি অভ্যাস আবার মনে করলেন (অনেক পানি, পরিমিত খাবার, নিয়মিত চলাচল) এবং সৌভাগ্যের কাটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন।       

সফল একজন নারী হিসেবে তিনি নিজের বাহ্যিক রূপ ও ওজন নিয়ে কথা বলেন। সে হিসেবে তিনি বেশ বিরল। তিনি বলেন, ‘কেউই এ বিষয়ে তেমন কথা বলতে চায় না। এর চেয়ে এই ভান করা অনেক সহজ যে এসব এমনি এমনিই হয়ে যায়।’ নারীবাদের একের পর এক তরঙ্গ স্মার্ট নারীদেরকে বলেছে যে তাদের উচিত এতদিনে আত্মগরিমা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করা—যেভাবে তারা গৃহকর্ম ও স্রেফ সন্তান উৎপাদন দ্বারা চিহ্নিত অস্তিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে এসেছে।       

কিন্তু নিজের শরীর ও ওজনের ব্যাপারে মন্তব্যের কারণে গভীরভাবে বিচলিত হওয়ার ক্ষেত্রে নারী হিসেবে তিনি একা নন। ওজন ও স্বাস্থ্যবিষয়ক পডকাস্ট মেইন্টেনেন্স ফেজ এর সহ-উপস্থাপিকা অব্রে গর্ডনকে দশ বছর বয়সে এক ডাক্তার বলেছিল যে তার ওজন অতিরিক্ত বেশি। আমেরিকান লেখিকা  রোক্সেন গে বোর্ডিং স্কুল থেকে ফেরার পর আগের চেয়ে ৩০ পাউন্ড (প্রায় ১৪ কেজি) ওজন বেড়ে যাওয়ায় নিজের বাবা-মা’র হতবাক দশার কথা লিখেছিলেন।   

এই অভিজ্ঞতাগুলো গভীরভাবে ব্যক্তিগত, আবার একইসাথে ভীষণ সার্বজনীন, অন্তত উন্নত বিশ্বে। নারীদের উপর ‘আদর্শ’ এক রূপের যে ধারণা চাপিয়ে দেয়া হয় তারই প্রতিফলন ঘটে এতে। এই আদর্শ সময়ের সাথে বদলেছে অনেক। রেনেসাঁসের নগ্ন ছবিগুলোতে নারীর দেহে পর্যাপ্ত স্থূলতা ও ভাঁজ লক্ষ করা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাতলা শরীরকেই আদর্শ বলে ধরে নেয়া হয়। টম উলফ-এর উপন্যাস বনফায়ার অফ দ্য ভ্যানিটিজ থেকে ধার করে ১৯৮০’র দশকে ‘সামাজিক এক্স-রে’ দিয়ে বোঝানো হতো সেইসব নারীদেরকে যারা এতটাই চিকন যেন তাদের গোটা অস্তিত্বই দ্বিমাত্রিক।  
    

৯০ এর দশকের লন্ডনে আবার এটাকে বলা হতো ‘হিরোইন শিক।’ আজকের দিনে আদর্শ শারীরিক গঠন হলো ‘উইজেল বড’, লস অ্যাঞ্জেলিনা জানান, যাকে সারাক্ষণ ঘেরাও করে রাখে নিখুঁত শরীরের জন্য মরিয়া নারীরা। এই নারীরা বেজির মত চিকন হতে চান, যেন কোনো আলোড়ন না তুলে পানির মধ্য দিয়েও তরতর করে চলে যেতে পারেন।  

নারীদের দেহের উপর যে বাড়তি গুরুত্ব চাপানো হয় তা সব নারীই একসময় বুঝে ফেলেন। যেনবা মেয়েরা অসচেতনভাবে একটা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যায় আর তারপর একসময় তাদেরকে গাছগুলো দেখানো হয়। তারপর তারা ভাবতে পারে গাছগুলো ওখানে এলো কী করে, কতদিন ধরে ওগুলো বড় হচ্ছে আর তাদের শিকড় ঠিক কত গভীর পর্যন্ত যায়। কিন্তু গাছগুলোর ব্যাপারে তাদের করার তেমন কিছুই নেই এবং দুনিয়াটা অন্য কোনোভাবে কল্পনা করাও প্রায় অসম্ভব। আর যদিও একটা গপ্পো প্রচলিত আছে যে চালাক ও উচ্চাশাসম্পন্ন নারীরা, যারা শ্রমবাজারে নিজেদের মেধা ও শিক্ষার মাধ্যমে অবদান রাখতে পারেন তাদের নিজেদের শরীরের ব্যাপারে অত সচেতন হওয়ার তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রমাণাদি ঘেটে দেখলে বোঝা যায় এমনটা বিশ্বাস করার তেমন কোনো ভিত্তি নেই। কেননা শরীরের ওজন তাদের আয় ও বেতনের উপরও প্রভাব ফেলে। দরিদ্র দেশগুলোতে, যেখানে গরীবদের চাইতে ধনীরাই ওজনে একটু ভারি, সেখানে এই সম্পর্কটা একটু অন্যরকমের। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি ও সাউথ করিয়ার মত ধনী এশিয়ান দেশগুলায় ধনীরা গরীবদের চেয়ে চিকন হয়। সাধারণত ওজনের বেশিরভাগ পরিমাপক, যেমন দেহের ভরের সূচক, অতিরিক্ত স্থূলতার নিয়ামক, অথবা মোট জনসংখ্যায় স্থূলতার হার ইত্যাদির সাথে আয় ও দারিদ্র্যহারের নিচে বাস করার মধ্যে একটা নিম্নমুখী সম্পর্ক থাকে। 

গরীবদের ওজন যে ধনীদের চাইতে বেশি হয় তার ব্যাখ্যা আগেও দেয়া হয়েছে এইভাবে যে উন্নত বিশ্বে স্থূলতা আদতে দারিদ্র্যের পরিচায়ক। দরিদ্র লোকেরা প্রায়সময়ই সুস্বাস্থ্যকর খাদ্য কিনে খেতে পারে না। তারা ফাস্ট ফুড অথবা প্রসেসড খাবার বেছে নেয় কারণ হয়তো বাসায় তারা খাবার রান্না করার সময় পায় না অথবা ব্যায়াম করার মতও পর্যাপ্ত সময় তাদের জোটে না, কেননা কম-বেতনের চাকরিগুলোতে সাধারণত অনেক লম্বা শিফট ধরে কাজ করতে হয় এবং ‘ল্যাপটপ শ্রেণীর’ লোকেদের চাকরিগুলোর তুলনায় সেগুলো অনেক কম ফ্লেক্সিবল। আবার যেহেতু বেশিরভাগ সময় শিক্ষার স্বল্পতার কারণেই মানুষ অল্প বেতনের চাকরি করতে বাধ্য হয়, ফলে ধরে নেয়া যায় এই শিক্ষার অভাবের কারণেই তারা অনেকসময় জানেই না কীভাবে সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা যায়। 

এতসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সমস্যা হলো উন্নত দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার আয় ও ওজনের এই দ্বিমুখী সম্পর্কের প্রায় পুরোটাই সচল রেখেছে নারীরা। আমেরিকা ও ইতালিতে আয় ও স্থূলতার সম্পর্কের ঢাল পুরুষদের ক্ষেত্রে সমতল ও নারীদের জন্য নিম্নমুখী। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ঢাল পুরুষদের ক্ষেত্রে ও ঊর্ধ্বমুখী কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তা এতটাই নিম্নমুখী যে দুইয়ে প্রায় কাটাকাটি হয়ে যায়। ফ্রান্সে আবার ঢালটা পুরুষদের জন্যও খানিকটা নিম্নমুখী, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি। এরকমটা প্রায় সকল ধনী দেশেই দেখা যায় এবং ওজন কিংবা স্থূলতা মাপার যেকোনো পরিমাপকের ক্ষেত্রেই তা বহাল থাকে। 

ডাচেসের বিধান 

অন্যভাবে বললে, ধনী নারীরা গরিব নারীদের চাইতে অনেক চিকন কিন্তু বড়লোক পুরুষেরা আর গরিব পুরুষেরা প্রায় সমান মোটা। ওয়ালিস সিম্পসন, যাকে বিয়ে করার কারণে রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডকে সিংহাসন ছাড়তে হয়, তিনি নাকি বলেছিলেন একজন নারী ‘যতই চিকন বা ধনী হোক না কেন তা পর্যাপ্ত নয়।’ এখন তিনি নিজে হয় দুটোই ছিলেন না হয় কোনোটাই না। যারা মনে করে স্থূলতার প্রধান কারণ দারিদ্র্য অথবা অনেক টাকা-পয়সা থাকলেই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা যায় তারা এখানে একটু খটকায় পড়বেন। কেননা তাহলে ব্যাখ্যা করতে হবে এই সমীকরণ কেবল নারীদের ক্ষেত্রেই কেন কার্যকর। হয়তো উভয় লিঙ্গের জন্যই এই সমীকরণের ফলাফল একই হওয়ার কথা, কিন্তু তাদের পেশার কারণেই তারতম্য দেখা যায়। তুলনামূলকভাবে পুরুষরাই বেশির ভাগ কম-বেতনের ও কায়িক পরিশ্রমের চাকরিগুলোতে নিয়োজিত, যেমন নির্মাণকাজ (যদিও হাসপাতালের নার্সরাও প্রায় রাজমিস্ত্রীদের সমান হাঁটাচলা করেন ও দাঁড়িয়ে থাকেন, ও তাদের অধিকাংশই নারী।) অনেক সময় অভিনেত্রীদেরকে সিনেমার কাজ পাওয়ার জন্য এমনিতেই পাতলা শরীর ধরে রাখতে হয়।  

কিন্তু তবুও এত বিশাল ফারাক ব্যাখ্যা করার জন্য এটাও পর্যাপ্ত বলে মনে হয় না। আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে মোট জনসংখ্যার কেবল ৩.৫% লোক প্রচণ্ড মাত্রার কায়িক শ্রমে নিয়োজিত (এবং সেসব পেশার অনেকগুলোতেই নারীরা বহুলাংশে রয়েছেন, যেমন নাচ কিংবা ব্যায়ামের প্রশিক্ষক।) কেবল ০.১% মানুষ অভিনয়ের মত পেশার সাথে যুক্ত। আয় ও ওজনের দ্বিমুখী সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে একটি লৈঙ্গিক ফারাক রয়েছে, এবং তা নারী ও পুরুষের মধ্যকার অন্যান্য পার্থক্য দিয়ে ব্যাখ্যাও করা যাচ্ছে না, সুতরাং পুরো ব্যাপারটা অন্য এক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়: হয়তো চিকন হওয়া নারীদের জন্য ধনী হওয়ার পথ সহজ করে দেয়।  

অসংখ্য গবেষণায় পাওয়া গেছে যে স্থূল নারীরা তাদের চিকন সহকর্মিনীদের তুলনায় কম বেতন পান। অপরদিকে স্থূলকায় পুরুষ ও ‘স্বাভাবিক’ ওজনের পুরুষদের বেতনের মাত্রার মধ্যে তেমন কোনো তারতম্য নেই। কিছু ব্যতিক্রম অবশ্য আছে: একটা সুইডিশ গবেষণাপত্র অনুযায়ী, দেখা গেছে যে স্থূলকায় পুরুষরাই কম বেতন পায়, নারীরা না। কিন্তু আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা ও ডেনমার্কের গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্থূল নারীরাই বেতন কম পায়। একজন নারীকে মোটা হওয়ার বেশ ভালোই মূল্য চোকাতে হয়, এতে তার বেতনের প্রায় ১০% কাটা পড়ে। 

স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যও বেড়েছে  

দেহের মাপের জন্য যাকে কোনোদিন কোনো চাকরি দেয়া হয়নি তার জন্য আয়ের এই ফারাকটা আঁচ করা অনেক কঠিন হবে। কেবল শরীরের গড়ন পাতলা হওয়ার কারণে একজন নারী এত বেশি বেতন পেতে পারেন যে, তার জন্য আরো বেশি পড়াশুনা করার চাইতে ওজন কমানোতে মনোযোগ দেয়াই বেশি লাভজনক হবে। একটা মাস্টার্স ডিগ্রি একজনের বেতনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে ১৮%। একজন নারী কেবল ৬৫ পাউন্ড ওজন কমানোর মাধ্যমে এর ১.৮ ভাগ বেতন বৃদ্ধি করাতে পারেন। শ্বেতাঙ্গ নারীদের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি ঘটে—কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা হিসপ্যানিক নারীদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটার নজির তুলনামূলক অনেক কম (যদিও এর কারণ হতে পারে যে গবেষণার ক্ষেত্রে সাধারণত বিএমআই মাপা হয়, এবং সে ক্ষেত্রে এইসব নারীদেরকে প্রায়ই ভুলভাবে শ্রেণীকরণ করা হয়।) 

মোটা নারীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য মোটেই কমেনি। অর্থনীতিবিদ ডেভিড লেম্পার্ট লিখেছিলেন, ‘স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমরা আশা করতে পারি তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য কমে আসবে। কেননা আজকের দিনে ওজন বেড়ে যাওয়া বেশ স্বাভাবিক। অথচ বর্তমানে স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যও বেড়েছে। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে এর মাত্রা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তার মতে এর কারণ হলো, ‘পাতলা দেহ বর্তমানে আরো বিরল হয়ে পড়ার কারণে সেটাকেই প্রিমিয়াম মনে করা হয়।’   

এই গবেষণাপত্র যে উপসংহারের দিকে ইঙ্গিত দেয় তাতে ক্রুদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। স্থূলকায় নারীদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে গোটা জীবন ধরে চাপিয়ে দেয়া আয়ের বৈষম্য তাদেরকে জেঁকে ধরে। তাদের শুরুর বেতনও হয় অনেক অল্প, এবং গোটা কেরিয়ারে পদোন্নতি পান তারা অনেক কম। তার গবেষণা অনুযায়ী, ‘১৯৮১ সালে এক ২০ বছর বয়সী নারীর তুলনায় ২০০৪ সালে এক ৪৩ বছর বয়সী স্থূলকায় নারী বেতনের ক্ষেত্রে অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।’   


তাছাড়া স্থূলকায় কর্মচারীরা যে মালিকদের অধিক খরচার কারণ হয় তার আংশিক প্রতিফলনও এখানে ঘটে। বিশেষ করে আমেরিকায় এমনটা বেশি ঘটে। হেলথ ইন্স্যুরেন্সের খরচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারাই বহন করেন। আর স্থূলকায় মানুষদের পিছনে এ ক্ষেত্রে বেশি খরচ হয়, কেননা বয়স বাড়ার সাথে সাথে এরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগতে থাকেন।  


তবু, এসবের ভার কেবল নারীদের উপরই কেন চাপিয়ে দেয়া হবে তা অস্পষ্টই থেকে যায়। এবং কানাডা ও ইউরোপ, যেখানে হেলথ-কেয়ারের খরচ সরকার বহন করে, সেখানেও নারীদের ক্ষেত্রে একইরকম আয়গত ঘাটতি লক্ষ করা যায়।   

স্থূলতার কারণে আয়ের বৈষম্য যে বাড়ছে বই কমছে না—তার প্রমাণ পাওয়া যায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ‘অন্তর্গত পক্ষপাত’ পরীক্ষার মাধ্যমে। পরীক্ষার্থীদের এখানে বলা হয় বিভিন্ন মানুষের জাতি, লিঙ্গ, সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশান কিংবা ওজনের উপর ভিত্তি করে তাদেরকে ভালো কিংবা খারাপ হিসেবে চিহ্নিত করতে। এবং এ ক্ষেত্রে ফলাফল বেশ ইতিবাচক দিকেই মোড় নিচ্ছে। জাতিগত ও লৈঙ্গিক বৈষম্য গত এক দশকে বেশ কমে এসেছে। সমকামীদের প্রতি বিরূপ মনোভাবও এক তৃতীয়াংশ কমেছে। কিন্তু ওজনের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। শারীরিকভাবে ভারী মানুষের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব আগের চেয়ে বেড়েছে।    

এই প্রেক্ষাপটে নারীরা ওজন কমানোর জন্য এত চাপ ও নিজের ওজন নিয়ে এতটা হীনমন্য কেন বোধ করে তার পিছনের অন্যসব কারণ ও ব্যাখ্যাগুলো বেশ অসম্পূর্ণ মনে হয়। হয়তো নারীরা নিজেদের শরীর নিয়ে এত হীনমন্য  বোধ করে কারণ সারাক্ষণ তারা ম্যাগাজিনের তন্বী মডেলদের দেখে ভাবে সেগুলো একদম এডিটেড না এবং নিজেদের সাথে তুলনা করে। কিংবা হয়তো কোনো ডাক্তার অথবা বাবা-মা ছোটবেলায় তাদের শরীর নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছিল। বর্তমান বাজারের এসব চাপের পাশাপাশি: নারীরা হয়তো মনে করে যে ওজন কমাতে না পারলে তাদেরকে তার খেসারত দিতে হবে। আর সেটা সত্য।   

অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায়, পড়াশুনায় সময় দেয়া বুদ্ধিমান কাজ কেননা শ্রমবাজারে তার স্পষ্ট লাভ পাওয়া যায়। একইভাবে একজন নারীর জন্য ওজন কমাতে চাওয়াও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। কোন খাবার কতটুকু খেতে হবে এই নিয়ে মাথা ঘামানো ও ব্যয়বহুল ব্যায়ামের পিছনে টাকা খরচ করা আসলে এক প্রকার বিনিয়োগ পরবর্তীতে যার রিটার্ন পাওয়া যায়। পুরুষদের জন্য এমনটা হয় না।        

অলংঙ্করণঃ ঈহা

নারীরাও এই ব্যাপারে বেশ সচেতন। এক প্রজন্ম আগেও এ ব্যাপারটাকে তারা তেমন আমলে নিত না। ‘চাকরির পরে—কিংবা এর মধ্যেই সবচেয়ে মৌলিক যে বিষয়টা সামলাতে হবে তা হলো নিজেকে দেখতে কেমন লাগছে ও কেমন বোধ হচ্ছে। একজন নারী যে সবকিছু পেতে চায়, সে মোটা হয়ে থাকতে চাইবে তা ভাবাই যায় না’,  নিজের বই হ্যাভিং ইট অল-এ লিখেছিলেন ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে কসমোপলিটান ম্যাগাজিনের সম্পাদক হেলেন গার্লি-ব্রাউন। এই বইতে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন কীভাবে দিনে ৮০০ ক্যালোরির খাবার খেয়ে টিকে থাকতে হবে, এবং  নারীদেরকে উপদেশ দিয়েছেন প্রতিদিন নিজেদের ওজন মেপে দেখতে ও মেনে নিতে যে ‘ডায়েট করা একদম জাহান্নাম, এবং এই নিয়ে এত মন খারাপ করার কিছু নেই!’   

আজ থেকে চার দশক আগে এরকম মনোভাব বেশ গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা খুব একটা বদলেছে বলে মনে হয় না। বদলেছে শুধু বয়ানটা, যা এখন সকল প্রকার শারীরিক গঠনের প্রতি সহিষ্ণু হয়েছে এবং ডায়েট করাকে নাকচ করেছে। সাউথ-বীচ ডায়েট কিংবা অ্যাটকিন্স খাদ্য বাতিলকরণের বদলে এখন বলা হয় গ্লুটেন-মুক্ত, ভিগান, লো-শুগার—সুস্বাস্থ্যের ছদ্মবেশে এখন এসবের প্রচারণা চালানো হয়। মানুষ বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে সোল সাইকেল ক্লাসে যায় ফিট থাকার জন্য, ক্যালোরি বার্ন করার জন্য না। জিয়া টলেন্টিনো তার ট্রিক মিরর বইয়ে লিখেছেন,  ‘এখনকার চকচকে ম্যাগাজিনগুলোও আগের মত আর  নারীর আদর্শ কোনো রূপের প্রচারণা চালায় না…কিন্তু একজন আদর্শ নারীর সেই পরজীবী ধারণা বর্তমান আপাত-বিরূপ আবহের মধ্যেও টিকে আছে।’ নারীবাদ ‘আদর্শ নারীর ধারণার দুঃশাসনকে নির্মূল করার পরিবর্তে আরো ঘোলাটে করে তুলেছে।’ 

পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ধারণাটা ভ্রান্ত

ওজন বাড়ার সাথে সাথে যেহেতু স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়, ফলে অনেকেই বলে থাকেন যে নারীর উপর ওজন কমানোর যে চাপ দেয়া হয় তা তেমন খারাপ কিছু না। কিন্তু এই যুক্তির ভিত্তি বেশ নড়বড়ে।
প্রথমত, মানুষের ওজন সবসময় তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। 

দ্বিতীয়ত, লজ্জা একটা কার্যকর হাতিয়ার। বেশিরভাগ মানুষের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী একটু কম খেলে ও বেশি নড়াচড়া করলেই ওজন কমে যায়, ফলে এমনটা মনে করা স্বাভাবিক যে ওজন ও স্থূলতা সহজেই পরিবর্তনীয়। মনে হতে পারে চিকন মানুষেরা কষ্ট করে এই শারীরিক গঠন অর্জন করেছে ও মোটা ব্যক্তিরা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনটা হলে নারীরা চাইলেই এই ওজন-বৈষম্য থেকে মুক্ত হতে পারেন, সমাজ তাদের কাছে যেরকম শারীরিক গড়ন আশা করে সেটা মেনে নিলেই হয়।   

কিন্তু পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণের এই ধারণাটাই ভুল। অনেকেরই অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট সেবন শুরু করার পরে ওজন বাড়তে শুরু করে; পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম জাতীয় সমস্যার কারণে নারীরা আরো বেশি মাত্রায় এসবের সম্মুখীন হন। গে বলেছিলেন যে যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরবর্তীতে তার ওজন বেড়ে যায়। এছাড়াও প্রশ্ন জাগে ১৯৮০ সালের পর মানুষের খাদ্যাভ্যাস এভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল কেন? কেননা ১৯৮০ সাল থেকেই উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে স্থূলতার হার অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়তে শুরু করে। বিজ্ঞানীরাও এ প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারছেন না (কেউ কেউ প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে আঙুল তোলেন) কিন্তু তারা একমত যে নিজের ইচ্ছামত ওজন কমিয়ে ফেলা প্রায় অসম্ভব—এবং এমনটা করতে পারাদের সংখ্যা খুবই কম। সে তুলনায় এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি যারা সারাজীবন ওজন কমানোর চেষ্টা করে যায়, তারপর ব্যর্থ হয়ে নিজেদেরকে দোষারোপ করতে থাকে।     

হয়তো চক্ষুলজ্জা কারো কারো জন্য কাজে দেয়। মিসেস গুইলিয়ানোর জন্য দিয়েছিল। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো বাবার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাকে এড়িয়ে যাওয়ার বদলে তিনি ওজন কমিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন, কিছুক্ষণ তিনি চুপ করে থাকলেন। তিনি বললেন, ‘কিন্তু, অবশ্যই, বাবা তো ঠিকই বলেছিলেন।’  

মূল্যটা ভীষণ চড়া 

ওজন বেড়ে যাওয়ার যে কলঙ্ক, লজ্জা বা ভয় মেয়েদের মধ্যে কাজ করে, তার বদলে মেয়েদেরকে যে খেসারত দিতে হয় সেটার কথাও ভাবুন। নারী হিসেবে এ দুনিয়ায় চলাফেরা করলে নারীদেরকে কী পরিমাণ সময় নিজেদের খাবারের হিসাব রাখায়, ডায়েটের বই পড়ায়, ব্যায়ামের ক্লাস করায় ব্যয় করে তা নজর এড়ানো প্রায় অসম্ভব। জীবনে যারা কখনো জুস ক্লেঞ্জ কিংবা বাধাকপির স্যুপের ডায়েট করেছেন তারা জানেন যে ওজন কমানোর এই প্রচেষ্টার কারণে মেয়েরা নিজেদের পছন্দের অন্য অনেক কাজই আর করতে পারে না, যেমন পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়া কিংবা নিজেদের পছন্দের খাবার খাওয়া।   

কিছু জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ছয় বছর বয়সী মেয়েরাও নিজেদের উপর চিকন শরীর ধরে রাখার চাপ অনুভব করে থাকে। আর বয়ঃসন্ধিকাল পার করার সময় তারা ‘আচানক সৌন্দর্যের এক অবাস্তব প্রত্যাশার চাপে নাজেহাল হয়ে পড়ে, এবং ভাইরাসের মত তাদের মধ্যে ক্ষুধামান্দ্য কিংবা বুলিমিয়ার মত রোগ ছড়াতে থাকে,’  লিখেছেন মিসেস টোলেন্টিনো। আর সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হলো এখান থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। বেশিরভাগ নারীই এসবের সাথে মানিয়ে নেন। কেউ কেউ মেনে নেন না। আর অনেকে স্রেফ ব্যর্থ হন। কিন্তু যে পথটাই তারা বেছে নিক না কেন, তার মূল্যটা ভীষণ চড়া।  

[লেখাটি দি একোনমিস্ট পত্রিকায় ২০ ডিসেম্বর ২০২২ এর ক্রিসমাস স্পেশাল সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ছিলোঃ দ্য ওয়েইট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। ]      

খাওয়ার বদলে ‘বাইরে খাওয়া’—বাঙালি মধ্যবিত্তের নতুন বন্দোবস্ত?

ম্যাচ শেষে আফগানিস্তান কোচ জনাথন ট্রট বলেন তার এই ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই, ‘আমার কোন ধারণা নেই। কখনো কি দুটি সুপার ওভার হয়েছে? আমি এটাই বলার চেষ্টা করেছি। এটা একদমই নতুন ব্যাপার। নিয়মগুলো আমরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করছি, জানছি।’

সিমু নাসের

সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক

'টুয়েলফথ ফেল'কে কেন্দ্র করে মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়েই এই লেখা। ভারত ও বাংলাদেশে 'টুয়েলফথ ফেল' সিনেমাটির জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হলো এর প্রেমকাহিনী।

খাওয়ার বদলে ‘বাইরে খাওয়া’—বাঙালি মধ্যবিত্তের নতুন বন্দোবস্ত?

নব্বই দশকের এক্কেবারে শুরুর দিক। হুট করে বাড়িতে ফুপা এসেছেন। যেমন-তেমন আসা না। বিদেশ থেকে এসেছেন, ঢাকায় একবেলা বিশ্রাম নিয়ে তারপর আস্তে-ধীরে বাড়িতে যাবেন। যেহেতু হুট করে আসা, বাসায় নেই কোনো প্রস্তুতি। ‘অগত্যা’ আনানো হলো নান্নার মোরগ-পোলাও। জামাই-মানুষ, তারপরও রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনানো হচ্ছে, বাসার মানুষদের মনে হচ্ছে খুবই কুণ্ঠিত। আমাদের ছোটোদের তাতে কী আসে যায়! বাসার মাঝে ‘হোটেলের খাবার’, নতুন ব্যাপার-স্যাপার! বহুদিন মুখে লেগে ছিল সেই মোরগ পোলাওয়ের স্বাদ।  

একই বাসা। সময়ের সাথে সাথে বদলেছে বাসার ‘মুরুব্বির আসন’। আবার এসেছে জামাই, সেটা আমার বোন-জামাই। সিদ্ধান্ত হলো, প্রায় প্রায়ই যেহেতু এখানে-সেখানে এটা-সেটা খাওয়ানো হয়, জামাইয়ের সম্মানে এবার ঘরে রান্না করা হবে। হলো রান্না। একেবারে আয়োজন করা রান্না—এখনকার সময়ে অনেকটা বিরল অভিজ্ঞতা! এই খাবারের স্বাদও মুখে লেগে রইল অনেকদিন।  

ওপরের উদাহরণটা নিছকই উদাহরণ, নিজের জীবন থেকে নেওয়া একটা উদাহরণ আরকি। কিন্তু এদেশের অন্তত শহরাঞ্চলে তাকালে দেখা যায়, এটা মোটেও আমার একার উদাহরণ না। গত কয়েক দশকে ঢাকার মধ্যবিত্ত সমাজের ‘বাইরে খাওয়া’ বিষয়টা ‘একেবারে না-পারতে’ বা ‘ঠ্যাকায় পড়ে খাওয়া’ থেকে হয়ে উঠেছে প্রাত্যাহিক বাস্তবতা। এটা এখন এমনই এক বাস্তব সত্য, যেটাকে যুক্তি-তর্ক দিয়ে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করার কিছু নেই। তারপরও বলি। বাংলাদেশের কুইক সার্ভিস রেস্তোরাঁ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে এই বাজারে আয় হয়েছে প্রায় ১৭৫৪ মিলিয়ন ডলার। ২০২৮ সালেই যা গিয়ে দাঁড়াবে ২৬৫৩ মিলিয়ন ডলারে। বুঝতে পারছেন ব্যাপার? ফুলেফেঁপে কলাগাছ পার হয়ে বটগাছ হয়ে যাওয়ার অবস্থা! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো দ্রুত পরিবর্তিত কর্মজীবন, বাড়ন্ত মধ্যবিত্ত আর খাবারের অনলাইন ডেলিভারি।

কিন্তু কেন বলছে বিশেষজ্ঞরা এমন? আসলেই কি যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দিয়ে ধরা যায় একে?
চলুন চেষ্টা করি। 

যুক্তি ১: সময় কখনও ‘নানের’ জন্য অপেক্ষা করে না 

আজকের শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনে মহামূল্য এক সম্পদ, তার নাম সময়। বিশেষ করে যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মজীবি, সেখানে বাসায় ফিরে রান্না-বান্না করার সময়ই কই; সেইসাথে মানসিক শক্তি আর আগ্রহই বা কই। আগে যেখানে স্কুল বা অফিস আর বিকালে টিভি দেখে, আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় টিভি দেখা ছিলো চক্রের মতো চলমান; এখনকার জীবনে কী যে হয়ে যাচ্ছে সেই তাল মেলানোই কঠিন! দ্রুতগামী, ব্যস্ত ও অনেকখানি বিশৃঙ্খল। 

কর্মব্যস্ত পরিবারে যদি বলা হয় ছুটির দিনটা বাইরেই খাওয়া যাক—এরচেয়ে খুশীর কথা আর নেই। অফিস শেষে জ্যাম ঠেলে বাড়ি এসে আবার বাজার করা, রান্না করা—এসবের বদলে ১৫ মিনিটে রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসে পড়া কী যে স্বস্তির! অনেকে আবার থাকেন ব্যাচেলর। একা বাসায় নিজের জন্য রান্না আর কতক্ষণ ভাল্লাগে—অন্তত বিকল্প যখন হাতের কাছেই আছে? তাই রেস্টুরেন্ট হয়ে উঠছে এক বিকল্প সংসার। সেই রেস্টুরেন্টের জানালার ছবি তুলেই মানুষ স্টোরিতে মিউজিক বসায়—আমার জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়।  

পাল্টা যুক্তি ১: ফুড ডেলিভারি অ্যাপেও তো সময় বাঁচে। তাহলে মানুষ রেস্টুরেন্টে যায় কেন? 

ভালো যুক্তি। ফুড ডেলিভারি অ্যাপ আছে। অ্যাপের ব্যবহারও আছে। বিশেষ করে ব্যস্ত অফিসের ফাঁকে টুক করে পছন্দের খাবারটা খেয়ে নিতে, কিংবা রেস্টুরেন্টে যাবার আলস্যি বা অসুবিধা থেকে বাঁচতে ঘরে বসেই অর্ডার করেন অনেকে। আছে বিভিন্ন হোম কিচেন, সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ। মানুষ সেখান থেকেও অর্ডার করছে। বিশেষ করে কোভিডের লকডাউনে এইসবই মানুষকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ দিয়েছিল ভালোভাবে। 

এই পাল্টা যুক্তির উত্তরও আবার আছে। খাওয়ার ব্যাপারটা এই সময়ে এসে আপনি শুধু উদরপূর্তি দিয়ে দেখলেই তো হবে না! রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়াটা একধরনের সামাজিকতা, মুড পরিবর্তন, সময় কাটানো। অনেক সময় ফ্লেক্স নেওয়াও। এই আউটিঙের স্বাদ ভাই আপনাকে ফুড ডেলিভারি দিতে পারবে না! হ্যাঁ, ফুড ডেলিভারিতে অর্ডার করে খাচ্ছে মানুষ। কিন্তু আরও বহু বহু মানুষ রেস্টুরেন্টে যাচ্ছে। ফেলে ছড়িয়ে খাচ্ছে, হাহাহিহি করছে, ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান দিচ্ছে—দেখো আমি একটা সুখের সময় কাটাচ্ছি, রেস্টুরেন্টে ভালোটা-মন্দটা খাচ্ছি। 

যুক্তি ২: রেস্টুরেন্টের ছাড়া বিনোদনের আর বিকল্প কোথায়? বিকল্প দেখানোর মানুষটাও তো এখন নাই! 

হ্যাঁ, মানুষ ছিলেন একজন আমাদের। তিনি আমাদের ডিমের বিকল্প দেখিয়েছেন, বেগুনের বিকল্প দেখিয়েছেন, মাংসের বিকল্প দেখিয়েছেন। ওই যে, কাঁঠালের বার্গার বানিয়ে খেতে বললেন। কিন্তু, মানুষটা চলে যাওয়ার পর কেউ আর আমাদের বিকল্প দেখায় না! ঢাকা শহরে বিনোদনের জন্য খুব অল্প পার্ক, আরও অল্প খেলার মাঠ। মানুষ দুদণ্ড বসবে কোথায়? আর যেখানে গিয়ে বসতে পারে, সে জায়গার নিরাপত্তা কোথায়? আর যে জায়গায় এগুলোও ম্যানেজ করা সম্ভব, তেমন জায়গায় এন্টারটেইনের সুযোগ কোথায়? হাতেগোনা লাইব্রেরি, ধীরে ধীরে কমতে থাকা সিনেমা হল, নাট্যমঞ্চ। নাটোরের বনলতা সেনও নেই, আর আপনিও জীবনানন্দ দাশ না যে কেউ আপনাকে দুদণ্ড শান্তি দেবে। তাহলে?

শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে, তারসাথে পাল্লা দিয়ে কমছে বিকল্প বিনোদনের জায়গাগুলো। আর, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেস্টুরেন্ট। সেটারও নানান রকমভেদ। কাজিনরা সব একসাথে হলে হইহই করে পুরান ঢাকায়, অফিসিয়াল মিটিঙে ধানমণ্ডির কোনো কফিশপ, বনানির কোনো রুফটপ রেস্টুরেন্ট। একান্তে নিজের মানুষটার সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে হয়তো পাঁচতারা হোটেলে বাই ওয়ান গেট ওয়ান কার্ড যোগাড় করে ব্যুফে! অথবা রাস্তার কোনো সস্তা হোটেলে বদ্ধ কেবিনে বন্দী দুজনে রুদ্ধশ্বাস কত অপেক্ষার! খাবার এখানে মুখ্য না, উপলক্ষ মাত্র। 

এমনকি রেস্টুরেন্টে জন্মদিন পালন, অফিসের ফেয়ারওয়েল, স্কুল-কলেজের রিইউনিয়ন, আর প্রপোজ করার ঘটনাও এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবার যেন পার্শ্বচরিত্র, প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ‘স্থান’।

পাল্টা যুক্তি ২: কিছু খোলা পার্ক, বইমেলা, কিংবা রবীন্দ্র সরোবরও তো আছে! 

আছে। সেইসাথে এখনকার সময়ের মধ্যবিত্তের ভিন্ন রকম চাহিদাও আছে। পার্কে বসে বাদাম ছিলতে ছিলতে ভাব-ভালোবাসার কথা বলতে ভালোই লাগে। একবার-দুবার, তারপর? তারপরই বসতে গেলে আপনার দরকার হবে মোবাইলে চার্জ দেওয়ার। একটা আরামদায়ক চেয়ার। ওয়াইফাই। সুযোগ থাকলে এসি। তারচেয়ে বড় জিনিস, প্রাইভেসি! এই জিনিস প্রতিটা মানুষ প্রাপ্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রেস্টুরেন্টেই ওটা এখন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। অন্তত অন্যান্য জায়গার মতো রেস্টুরেন্টে আপনি বা আপনারা প্রধান দ্রষ্টব্য না।

তারপর নিরাপত্তা, মশার হাত থেকে বাঁচা, কারেন্ট চলে গেলে জেনারেটর। ও ভালো কথা, রেস্টুরেন্টে কিন্তু খাবারও পাওয়া যায়। 

এই আধুনিক আরামগুলো নগরবাসী খোঁজে। তাই সে উপভোগ করতে বের হতে চাইলে প্রথমে এটা সেটা বিকল্প হাতড়ায়, তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে তাকেই বলতে শোনা যায়, এই জানিস, অমুক রেস্টুরেন্টের ফিশ বার্গারটা কিন্তু দুর্দান্ত। অ্যাম্বিয়েন্সটাও ইনস্টা ফ্রেন্ডলি। চলে আয় ৫টায়। আড্ডা হবে। 

যুক্তি ৩: সামাজিক স্ট্যাটাস ও মিডিয়া প্রভাব—‘রেস্টুরেন্ট কালচার’ এখন একধরনের স্বীকৃতি

খাবার কী খাচ্ছেন, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে খাচ্ছেন—খাবার নিয়ে একটা পুরানো দর্শন। এই দর্শনই এখনকার বিশ্বে অনেকটা আপ্তবাক্য হয়ে উঠেছে। আর আপনি কীভাবে খাচ্ছেন, কোন পরিবেশে খাচ্ছেন, সেটা দেখাতে এই সোশ্যাল মিডিয়ার জমজমাট সময়টাই তো মোক্ষম!  ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের কল্যাণে খাবার এখন শুধু খাওয়ার বস্তু নয়—এটা দেখানোর, উপস্থাপনের ও ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। কফিশপে বসে ‘সিনামন লাতে’ খাওয়ার ছবি, কোনো নতুন ফিউশন রেস্টুরেন্টে গিয়ে ওপেন কিচেনের ভিডিও—এসব এখন একধরনের ‘লাইফস্টাইল স্টেটমেন্ট’। উঁহু, নাক বেঁকিয়ে লাভ নেই, ওটা আপনিও করেন। হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি/ভিডিও/টেক্সট দেন, অথবা দেখেন, অথবা দুটাই করেন। রান্নার মতোই গুরুত্বপূর্ণ এখন ‘রিভিউ করা’, ‘ভ্লগ বানানো’, ‘রেটিং দেওয়া’ । ভোজনরসিকতা এখন শুধু রসনা তৃপ্তি না, সামাজিক পুঁজি অর্জনের পথও বলা চলে।

এই অংশে আরও বলা দরকার—খাদ্যসংস্কৃতির এ যে পরিবর্তনটা ঘটছে, তার মধ্য দিয়ে এখন শ্রেণি, রুচি, ও চিন্তার নতুন ‘সাংস্কৃতিক মানচিত্র’ তৈরি হচ্ছে। বনানীর রুফটপ রেস্টুরেন্ট আর মোহাম্মদপুরের পারিবারিক খাবারের দোকান—দুটার ভিজ্যুয়াল ও ভাষা আলাদা। ফলে এই রেস্টুরেন্ট কালচার শ্রেণি-ভিত্তিক সংস্কৃতি গঠনের মাধ্যমেও পরিণত হয়েছে।

পাল্টা যুক্তি ৩: আমরা কী খাচ্ছি—সেটা কি এখন গৌণ হয়ে উঠেছে?

এই প্রবণতার ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক বিপন্নতা। খাবার এখন কেবল দেখার বিষয় হয়ে গেছে। স্বাদের, পুষ্টির বা ইতিহাসের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ‘প্রেজেন্টেশন’। বুমারসের চাইনিজ প্ল্যাটার নাকি লায়লাতির চাইনিজ প্ল্যাটার—কোনটা ইনস্টাগ্রামে ফটোজেনিক, সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখ্য ।

সত্যি বলতে, এই প্রবণতা একধরনের বিকৃতি তৈরি করছে। তবে এটাও মানতে হবে, খাবার কেবল পুষ্টি বা স্বাদের বিষয় নয়—এটাও একধরনের গল্প বলার উপায়। রেস্তোরাঁয় খাওয়ার মাধ্যমে অনেকে নিজেদের অভিব্যক্তি, রুচি এবং চিন্তার পরিচয় দিতে চায়। তাতে কোনো সমস্যা নেই, তবে স্বাদের, শিকড়ের আর অর্থপূর্ণ সামাজিকতার জায়গাটা যেন থাকে।

যুক্তি ৪: মধ্যবিত্তের পকেট ফ্রেন্ডলি বিলাস 

একসময় রেস্টুরেন্ট মানেই বিলাসিতা। এখন সেটাই অনেক মধ্যবিত্তের জন্য ‘সাশ্রয়ী বিলাস’। এক কাপ কফি কিংবা ২০০ টাকার একটি বিরিয়ানি প্লেট দিয়ে আপনি নিজেকে একটু ‘পুরস্কৃত’ করতেই পারেন। ভ্রমণ বা বড় বিনোদনের সুযোগ যেখানে সীমিত, সেখানে এই ছোটো খরচেই অনেক মানুষ আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে।

শহুরে ক্লান্তি, কাজের চাপ, পারিবারিক সংকট—সবকিছু থেকে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া যায় এই খাবার-কেন্দ্রিক সামাজিকতায়। অন্য মানুষের কথা কী বলবো, আমিই তো ঠিক করে রেখেছি এই লেখাটা শেষ করে এক প্লেট ঝাল দেওয়া ভেলপুরি খাব। একটা ‘মাইক্রো রিওয়ার্ড’ না পেলে কি চলে?

অনেকে একা যান, অনেকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে যান। যান অনেকেই। রেস্তোরাঁ আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছে একধরনের মানসিক আশ্রয়।

খাবার কী খাচ্ছেন, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে খাচ্ছেন—খাবার নিয়ে একটা পুরানো দর্শন। এই দর্শনই এখনকার বিশ্বে অনেকটা আপ্তবাক্য হয়ে উঠেছে। অলঙ্করণ করেছেন সামিউল

পাল্টা যুক্তি ৪: এই ‘সস্তা বিলাসিতা’র জন্য কি আমরা হারাচ্ছি দীর্ঘমেয়াদে আত্মনির্ভরতা?

খাবার নিজে রান্না করা, নিজস্ব খাদ্য সংস্কৃতি বজায় রাখা একধরনের আত্মপরিচয়ের অংশ। যখন পরিবার নিজেরা রান্না করা বন্ধ করে দেয়, তখন খাবারের মধ্যে থাকা পারিবারিক বন্ধনও হারিয়ে যেতে পারে।

এ নিয়ে অবশ্যই ভাবা দরকার। তবে প্রতিদিনের একঘেয়েমি ও চাপ থেকে স্বস্তি পেতে যদি রেস্তোরাঁয় যাওয়া হয়, তা হলে সেটাকে পুরোপুরি নেতিবাচক না বলে, তা ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। হ্যাঁ, সচেতনতা জরুরি—কোথায় থামতে হবে, সেটাও জানতে হবে।

যুক্তি ৫: শ্রেণি-নির্ভর রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি—নতুন সামাজিক বিভাজন?

শহরের রেস্তোরাঁ সংস্কৃতির প্রসার নতুন এক সাংস্কৃতিক শ্রেণি তৈরি করেছে। দামি রুফটপ ক্যাফে, ফিউশন রেস্টুরেন্টে যাওয়া এখন নিম্নমধ্যবিত্ত বা শ্রমজীবী মানুষের জন্য দুর্লভ। যার কারণে এই রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি একধরনের সামাজিক বিভাজনেরও প্রতীক হয়ে উঠছে—যেখানে কিছু মানুষ শুধু ফেসবুক ছবির মাধ্যমে এই জীবনযাপনকে চেনে।

পাল্টা যুক্তি ৫: নতুন উদ্যোক্তা, ফুড কার্ট, লোকাল খাবার—এই বিভাজন কি কাটিয়ে উঠছে?

হ্যাঁ, ফুড কার্ট, লোকাল ফুড আর নতুন উদ্যোক্তাদের কারণে এই ফাঁকও কিছুটা কমছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তরুণ উদ্যোক্তা বা এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেই এখন এমন অনেক হোম-বেইজড ফুড বিজনেস গড়ে উঠছে যারা তুলনামূলক কম দামে বৈচিত্র্যময় খাবার পরিবেশন করছে। ফলে একধরনের ইনক্লুসিভিটির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ব্যাপারটা আমাদের মনোযোগ দাবি করে—খাদ্য যদি আত্মপ্রকাশ হয়, তবে তা যেন কেবল এক শ্রেণির একচেটিয়া না হয়। শহুরে খাদ্যচর্চায় একইসাথে ইনক্লুসিভিটি রাখা আর বহুমাত্রিক হওয়া খুবই প্রয়োজন। 

এতসব যুক্তিতে তাহলে কী দাঁড়াল? 

বলতে গেলে কিছু দাঁড়ায় নাই। কোনো কিছু দাঁড় করানো এই লেখার উদ্দেশ্যও না আসলে। এই সময়ে ‘বাইরে খাওয়ার’ দৃশ্যপটটা কথায় কথায় একটু সামনে নিয়ে আসা আরকি।

বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্তের বাইরে খাওয়ার প্রবণতা নিয়ে যারা নাক উঁচু করেন, তারা প্রায়ই একটা আদর্শ বাঙালি পরিবার কল্পনা করেন—যেখানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সবাই একসঙ্গে খায়, মা রাঁধেন, বাবার পছন্দের তরকারি হয়, এবং সন্তানরা ‘বাসার খাবারেই তৃপ্ত’ থাকে। এই কল্পনা এই সময়ে এসে যতটা না বাস্তব, তার চেয়ে বেশি এক ধরনের আদর্শিক নস্টালজিয়া।

বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্তের রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভ্যাস তাই এখন আর শুধু খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন না, একটা বিস্তৃত জীবনচর্চার অংশ। এটাকে বলা যায় সময়ের ব্যবস্থাপনা, সামাজিক অবস্থানের প্রকাশ, বিনোদনের ঘাটতির প্রতিক্রিয়া আর একধরনের মানসিক মুক্তির খোঁজ।

শহরে যদি বিকল্প সাংস্কৃতিক পরিসর, নিরাপদ উন্মুক্ত স্থান ও সাশ্রয়ী বিনোদনের ব্যবস্থা বাড়ানো যায়, তাহলে মানুষ রেস্তোরাঁকে একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে নির্ভর করা কমিয়ে দেবে—এটা বলতে সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না। কিন্তু তার আগে আমাদের স্বীকার করতে হবে—রেস্তোরাঁ এখন আর শুধু খাওয়ার জায়গাই না। এটা হয়ে উঠেছে জীবনযাপন, আত্মপ্রকাশ ও আধুনিক শহুরে বাস্তবতার প্রতীকও।

আমাদের প্রয়োজন এই পরিবর্তনের গভীরে যাওয়া—তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বুঝে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার অভ্যাসকে আরও অর্থবহ, ভারসাম্যপূর্ণ আর সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করা। এই আরকি।