আচ্ছা, একজন মানুষকে ‘সুন্দর’ বলতে গেলে কোন দিকগুলো আমরা বিবেচনা করি? সৌন্দর্যের মাপকাঠি আজকের দিনে যেমন, অতীতের দিনগুলোতেও তেমনই ছিলো- এমন ধারণা ভুল। নারী (কিংবা পুরুষের) ‘নিখুঁত’ অবয়বের সংজ্ঞা যুগে যুগে বদলেছে, যদিও বিবর্তনের ধারায় নারীর শারীরিক গঠনে তেমন কোন পরিবর্তন আসে নি। কখনো নিজের দেহের গড়ন নিয়ে দ্বিধা বা সংকোচ হলে, তাই, মনে রাখবেন যে, ‘নিখুঁত’ দৈহিক গঠন একটি পরিবর্তনশীল ধারণা- যুগ আর প্রজন্মের সাথে সাথে বদলায় ‘আকর্ষণীয়’ দেহের সংজ্ঞা।
প্যালিওলিথিক যুগ
মানবজাতির ইতিহাসের একদম প্রথম দিকের একটি শিল্পচর্চার নিদর্শন হলো উইলেনডর্ফের ভেনাস (Venus of Willendorf), যা একটি আদিম নারীমূর্তি। খৃষ্টপূর্ব ২৪,০০০ থেকে ২২,০০০ সালের মাঝে নির্মিত এই নারীর অবয়ব—যা উর্বরতার প্রতীক হিসেবেই তৈরি করা হয়েছিলো- দেখতে মোটেই বর্তমান যুগের মডেলদের মতো নয়। এই নারীর আদলকে কোন রাকঢাক না করেই সরাসরি স্থূল বলা যায়। স্ফীত বক্ষযুগল, চওড়া নিতম্ব আর মেদবহুল উদরের এই মূর্তি দেখে ধারণা করা যায়, অধিক সন্তান জন্মদানের জন্য উপযোগী দেহই ছিলো সে যুগের আকর্ষণীয় নারীদেহের পূর্বশর্ত। প্রতিমাটি নির্মাণের সময় এর চোখ, ঠোঁট কিংবা মুখাবয়ব নিয়ে কোন কাজই করা হয় নি, মনে হতে পারে- কারিগরের চোখ মুখ নিয়ে কোন মাথাব্যাথাই ছিলো না। তবে স্বাভাবিকভাবেই সে যুগে নারী কিংবা পুরুষ- কারো জন্যই ক্ষীণকায় দেহ নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব ছিলো না। বেঁচে থাকতে হলে শারীরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার কোন বিকল্প ছিলো না। তাই মুখাবয়বের সৌন্দর্য নিয়ে কারো মাথাব্যাথা ছিলো না। কারণ সুন্দর চোখের ঝলক দেখিয়ে আর যাই হোক- হিংস্র সিংহের আক্রমণ ঠেকানো সম্ভব ছিলো না, দরকার ছিলো পেশীর জোর।
শিল্প যে সবসময় বাস্তবের মতোই হতে হবে, এমন কোন দায়িত্ব শিল্পীর ঘাড়ে থাকে না। উইলেনডর্ফের ভেনাস যে সমসাময়িক নারী আদলের নির্ভুল প্রতিকৃতি- এমনটি আশা করা ভুল। তবুও, ২৫০০০ বছর আগে সুডৌল আর স্বাস্থ্যবান নারীদেহই ছিল কামনীয়- এই ধারণার প্রমাণ পাওয়াই যায়।
প্রাচীন গ্রিস
গ্রিকরা আক্ষরিক অর্থেই সৌন্দর্যের সংজ্ঞায়ন করছিলো। প্রাচীন গ্রিসে নারীদের সৌন্দর্যের কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় গ্রীক সাহিত্যিক হেসিয়ডের (খৃষ্টপূর্ব ৮-৭ শতক) লেখায়। তিনি লিখেছেন, ‘প্রথম নারীর সৃষ্টি হয়েছিলো ‘কালন কাকন’ (Kalon Kakon) রূপে, যার মানে হলো ‘অশুভ-সুন্দর’। সুন্দর বলেই প্রথম নারী ছিল অশুভ, আর অশুভ বলেই প্রথম নারী ছিলো সুন্দর।’ তবে কি সেই যুগে পুরুষের সৌন্দর্য ছিলো সৌভাগ্য, আর নারীর সৌন্দর্য অলুক্ষুণে ব্যাপার? হতেও পারে! প্রাচীন গ্রীক ভাস্কর্যগুলোতে নারীদের যেই আদর্শ আদল শিল্পীর ছোঁয়ায় গড়া হয়েছিলো- সেখানে তাদের চওড়া কোমর, ভরাট স্তন আর কিছুটা মেদযুক্ত উদরের অধিকারী দেখানো হতো। তবে গ্রীকরা সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বের করার চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে ছিলোঃ তারা আবেদনময়তার অঙ্ক বের করার সংকল্প নিয়েছিলো।
গোল্ডেন রেশিও বা সোনালী অনুপাতের ধারণাটি প্লেটোর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেলেও এটি মূলত তার সহকর্মী পীথাগোরাসের মস্তিষ্কপ্রসূত (হ্যাঁ, জ্যামিতি বইয়ের সেই পীথাগোরাস)। প্রকৃতি কিংবা মানুষের মুখাবয়ব- সবখানেই সৌন্দর্যের মাপকাঠি হিসেবে বেছে নেয়া হয় গোল্ডেন রেশিওকে। এই গোল্ডেন রেশিওর হিসেবে একজন নারীর চেহারা তখনই সুন্দর বলা যাবে, যখন তার মুখের প্রস্থ তার দৈর্ঘ্যের দুই-তৃতীয়াংশ হবে, এবং মুখমন্ডলের দুইটি দিকেই প্রতিসমতা থাকবে। এই প্রতিসম মুখমন্ডল সৌন্দর্যের মাপকাঠি হিসেবে আজও বিবেচিত হয়। ‘আজ দেখতে ভালো না বলে…’- এরকম হতাশা যদি আপনার থাকে, তাহলে পীথাগোরাসকেই দোষারোপ করতে পারেন!
রেনেসাঁ যুগের প্রাথমিক পর্যায়
মধ্যযুগের প্রচলিত রক্ষণশীল চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে আসতে চেয়েছিলো রেনেসাঁ যুগের শিল্পীরা। ১৩০০ থেকে ১৫০০ খৃষ্টাব্দে চলমান রেনেসাঁ যুগের চিত্রকর্মে নগ্ন বক্ষের নারীদের দেখা যেত উর্বরতা ও বাসনার প্রতীক হিসেবে।
রেনেসাঁ যুগের প্রখ্যাত শিল্পী রাফায়েলের চিত্রকর্মে নারীদের আদর্শ অবয়ব ছিলো সুডৌল, কিছুটা ফ্যাকাশে গাত্রবর্ণের, এবং তাদের মুখ গোলগাল নরম আর রক্তিম আভায় রাঙানো। রাফায়েল নিজেই বলেছিলেন, তার ছবিতে তিনি বাস্তব নারীর আদলে আঁকেন নি, বরং তার কল্পনায় সুন্দর নারী যেমন ভাবতেন- তেমন করেই এঁকেছেন। অনেক চিত্রশিল্পী এমন স্টাইলেই ছবি আঁকতেন। রেনেসাঁ যুগ শৈল্পিক ধারায় এক নতুন যুগ ছিলো, যেখানে নারীদের নিছক জন্মদাত্রীর বদলে কামনা ও বাসনার প্রতীক হিসেবে ধরা হতো।
এলিজাবেথীয় যুগ
রানী এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন ১৫৫৮ সালে, আর তখন থেকেই শুরু হয় মেকআপ ব্যবহারের সূচনা। সেই আমলে মুখে মেকআপ করা নারীদের মনে করা হতো ‘শয়তানের অবতার’। আর এই ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করেন রানী এলিজাবেথ- মুখে সাদা মেকআপ আর তার বিখ্যাত ঠোঁটে লাল রং মেখে। বলা চলে, তার এই মেকআপের কারণেই সে আমলে পুরো ট্রেন্ড বদলে যায়। সেই যুগে সাদা আর ফ্যাকাশে গায়ের রং ছিলো সামাজিক উচ্চতার প্রতীক, কারণ অভিজাত শ্রেণী ঘরে বসেই জীবনযাপন করার বিলাসিতা করতে পারতো। রোদে পুড়ে তামাটে হওয়া গায়ের রংকে ধরা হতো দারিদ্রের লক্ষণ, খেটে খাওয়া মানুষের পরিচয়।
নিজের কুমারী ও রাজকীয়তার পরিচয় দিতে (পরবর্তীতে নিজের গুটিবসন্তের দাগ লুকাতে) রানী এলিজাবেথ মুখে সাদা সীসার পাউডার মাখতেন, এবং ঠোঁট রাঙাতেন লাল রঙে। তার এই ট্রেন্ড অনুসরণ করতে শুরু করে অভিজাত সমাজ, এমনকি সংবাদপত্রে বলা হতো যে ঠোঁটে লিপস্টিক জাদুর মতো কাজ করে- এমনকি মৃত্যুকেও দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। নিয়তির পরিহাসই হয়তো বলা যায়, মৃত্যুর সময় রানীর ঠোঁট রাঙানো ছিলো আধ-ইঞ্চি লাল রঙের প্রলেপে।
অলঙ্করণঃ রাজিব
ফরাসী বিপ্লব-পরবর্তীকাল থেকে শুরু করে ১৮ শতকের শেষভাগ
১৭৮৯ সালের ফরাসী বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে মানুষ অভিজাততন্ত্র ও রাজতন্ত্রের সকল প্রতীক থেকে সরে আসতে চেয়েছিলো। অতিরিক্ত মেকআপের বদলে তখন অনাড়ম্বর প্রসাধনই বেশি প্রচলিত হওয়া শুরু করে, অভিজাতদের বিশাল ফোলানো গাউনের পরিধিও ছোট হয়ে আসতে শুরু করে।
ফরাসী বিপ্লবের আগে মেকআপ ছিলো নারী-পুরুষ সবার প্রসাধন। কিন্তু এই বিপ্লবের পর থেকেই কৃত্রিমতা হয়ে উঠে ঘৃণ্য একটি ধারণা, যার কারনে হালকা প্রসাধনের ‘ন্যাচারাল লুক’-এর প্রতি সবার আগ্রহ বেড়ে যায়। কিন্তু উনবিংশ শতক থেকে বিপ্লবের স্মৃতি ধীরে ধীরে মলিন হতে থাকে, নারীদের মাঝে আবার মেকআপের আধিক্য জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
এ নিয়ে অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও, বারবনিতারা মেকআপ আর পোশাকের মুন্সিয়ানা দেখাতো মূলত পুরুষের মন জয় করতে। কিছু কিছু অভিজাত নারী রীতিমতো আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের অনাবৃত হওয়ার প্রদর্শনীর আয়োজন করতো দর্শনার্থীদের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই পুরুষদের কাছে এই ট্রেন্ড যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলো। তবে পুরুষদের মেকআপ করার রীতির প্রচলন তেমন জনপ্রিয়তা পায় নি, এটি নারীর ভূ্যণ হিসেবেই তকমা পেয়ে যায়। নারীদের সৌন্দর্যবর্ধন আর আবেদনময়ী হিসেবে দেখানোতেই প্রসাধন ব্যবহার করা হতো বেশি।
ভিক্টোরিয়ান যুগ
১৮৩৭ সালে যখন রানী ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে আরোহন করেছিলেন, ব্রিটিশ লাইব্রেরির রিপোর্টের মতে, সেই আমলে পরিমিতিবোধই ছিলো সৌন্দর্যের প্রতীক। আর বিবিসির বর্ণনায় জানা যায়, সেই যুগে ঘরে বসে মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার মাঝেই নারীদের জীবনের পরিপূর্ণতা নিহিত ছিলো বলে ভাবা হতো। শক্ত-সামর্থ্য নারীদের চেয়ে যেন ক্ষীণ, দুর্বলতাই ছিলো নারীদের প্রকৃত সৌন্দর্যের প্রতীক। শিল্পী এবং গবেষক এলেক্সিস কার্ল বলেন, ‘নারীদের ক্ষীণকায়ার মাঝেই প্রকৃত সৌন্দর্য প্রকাশ পায় বলে ধারণা করা হতো।’ কে জানতো, রোগা আর শীর্ণ দেহও আবেদনের প্রতীক হিসেবে ভাবা যেতে পারে?
সেই যুগে মেকআপের সামগ্রী ব্যবহার করাও ছিলো বিপদজনক ব্যাপার। সীসা, এমোনিয়া, পারদ আর নাইটশেডের মতো বিষাক্ত উপাদান ব্যবহার করা হতো প্রসাধনে, এগুলো বিপদজনক- এ কথা জানা সত্ত্বেও তারা এসব ব্যবহার করতো। সৌন্দর্য বাড়াতে বিষাক্রান্ত হতেও অনীহা ছিলো না ভিক্টোরিয়ান যুগের নারীদের। যদিও পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নমনীয় নারীদের মাঝেই এই ট্রেন্ড ফলো করার ঝোঁক ছিলো বেশি, তবে সব নারী আবার শুধুমাত্র সৌন্দর্যের জন্য মৃত্যুবরণ করতে রাজি ছিলো না।
বিশ শতকের শুরুতে
১৮৯০ সালে জনপ্রিয়তা পায় চার্লস গিবসনের আঁকা ‘গিবসন গার্ল’ ছবিটি, যা ছিলো সেই আমলের সুন্দর নারীর সংজ্ঞা। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত সেই চিত্রকর্মের নারীর মতোই হতে চেষ্টা করতো অনেক নারী। গিবসনের এই ছবিতে ফর্সা রঙের এই মেয়েটির পরিধান ছিলো আঁটসাঁট করসেট, যার ভাঁজ থেকে দেহের গড়নও স্পষ্ট দেখা যেতো।
চওড়া কটি, নরম এবং সুডৌল গঠন তখনও সবার আকাঙ্ক্ষিত ‘বডি স্ট্যান্ডার্ড’ হলেও সেই আমল থেকেই শুরু হয় কিছুটা সরু গঠনের দেহের জনপ্রিয়তা। যদিও ‘গিবসন গার্ল’ একটি কাল্পনিক নারীর আদলেই আঁকা হয়েছিলো, তবুও ইতিহাসের প্রথম সুপারমডেল এভেলিন নিসবেটের গড়ন ছিলো সেই গিবসন গার্লের অনেকটা কাছাকাছি। তবে ঘুরেফিরে সৌন্দর্যের এই মাপকাঠি এসেছিলো একজন পুরুষের কল্পনা থেকেই, কোন সত্যিকারের নারীদেহের উপর ভিত্তি করে আসে নি।
এভেলিন নিসবেট। যদিও ‘গিবসন গার্ল’ একটি কাল্পনিক নারীর আদলেই আঁকা হয়েছিলো, তবুও ইতিহাসের প্রথম সুপারমডেল এভেলিন নিসবেটের গড়ন ছিলো সেই গিবসন গার্লের অনেকটা কাছাকাছি।
১৯২০-এর দশক
১৯১০-এর দশকের পরপর শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, আর তখন অনেক নারীই পুরুষের সাথে সমান তালে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেয়া শুরু করে। আর যুদ্ধের পর তারা তাদের এই স্বাধীনতার স্বাদ ভুলে যায় নি। ১৯২০-এর দশকে পশ্চিমা নারীরা ভোট দেয়ার অধিকার অর্জন করে, এবং এতদিন ধরে চলে আসা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বেঁধে দেয়া সৌন্দর্যের স্ট্যান্ডার্ড বর্জন করা শুরু করে তারা। কিছুটা সংক্ষিপ্ত পোশাক আর ছোট চুলের একটি ফ্যাশন ট্রেন্ড শুরু হয়ে যায় তখন থেকেই, আর যেসব নারী এমন ট্রেন্ড অনুসরণ করতেন, তাদের সংজ্ঞায়িত করা হয় ফ্ল্যাপারস (Flappers) বলে। প্রথমবারের মতো সুডৌল দেহাবয়বের বদলে একহারা গড়নকে নিজেদের সৌন্দর্যের মাপকাঠি নির্ধারণ করে তারা। ছোট চুলকে বেশ ফ্যাশনেবল বলেই মনে করা হতো।
স্কার্টের পাশে থাকা হেমলাইন বা চিরের উচ্চতা তখন অনেকটা বেড়ে যায়, যাতে করে নারীরা আরও বেশি স্বাচ্ছ্যন্দে চলাফেরা করতে পারতো, মনের আনন্দে নাচতে চাইলে পা বেঁধে যেত না স্কার্টের ঘেরে। তবে এই আমলের একটি নেতিবাচক দিক হলো, একহারা সরু দেহের এই ট্রেন্ড নারীদের দেহের মেদ আর প্রস্থ নিয়ে অনেকটা হীনমন্যতায় ফেলে দেয়। ১৯২০-এর দশকের আগে নিজের ওজন মাপা একটা ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিলো, এমনকি পুরো দেহ দেখা যায় এমন আয়না বিলাসী দ্রব্য হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। সেই সময়ের আগে শুধু ধনীরাই নিজেদের পুরো অবয়ব আয়নায় দেখার সুযোগ পেত। কিন্তু এই ১৯২০-এর দশকে দেহের ওজন মাপার মেশিন হয়ে যায় সহজলভ্য, চাইলেই যে কেউ কিনে তার বাথরুমে রেখে দিতে পারতো। আর নিজের ওজন কতো, বেড়ে গেল কিনা- এমন ভাবনা বিভোর করে রাখতো সে সময়ের নারীদের। আর সে সময় অলিতে গলিতে গড়ে উঠতে শুরু করে অনেক ডিপার্টমেন্টাল স্টোর- যেখানে চাইলেই নারীরা নিজেদের পুরো আকার দেখতে পেতেন লম্বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। আর নিজেদের এই প্রতিচ্ছবিতে নিজ দেহের খুঁতগুলোই সবচেয়ে বেশি প্রকট হয়ে তাদের চোখে ধরা দিতো। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিলো নারীদের ‘বডি অবসেশন’।
তিরিশ ও চল্লিশের দশক
১৯২০-এর দশকের শেষদিকে শুরু হয় ‘মহামন্দা’র যুগ। তখন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ফ্যাশন নিয়ে ভাবনার সুযোগ তেমন ছিলো না। বেশিরভাগ নারীই আগের দশকের একহারা গড়নের এই ফ্যাশন নিয়ে ভাবা ভুলে যায়, আর তখনকার আমলে ভরাট নারীদেহই বেশি প্রচলিত হতে শুরু করে।
যুদ্ধ ও অন্যান্য দুঃসময়ে অভাব নারীদেরকে নিজেদের পোশাক নিয়ে আরও সৃজনশীল হতে বাধ্য করে। পুরুষের পুরোনো স্যুট কেটে নারীরা নিজেদের পোশাক বানানো শুরু করে তখন। চওড়া কাঁধ আর সরু কোমরে অনেকটা বালুর ঘড়ির মতো আদল নারীদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। যেহেতু এর আগের বছরগুলোতে অভাবের দুঃসময় কাটিয়ে আসতে হয়েছে, কেউ আর শীর্ণ দেহে নিজেকে দেখতে চাইতো না, কারণ তা বিগত অভাবের দিনের কথাই মনে করিয়ে দিতো। তাই বলে ১৯১০-এর দশকের গিবসন গার্লের মতো সুডৌল গড়ন হতে হবে- এমনটাও কেউ আশা করতো না।
পঞ্চাশের দশক থেকে ষাটের দশকের শুরুর বছরগুলো
এই সময়টিতে গ্রেট ডিপ্রেশন আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি ধীরে ধীরে ভুলে যেতে শুরু করেছিলো সবাই। পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে আমেরিকা, এই সময় ধনী হতে শুরু করে। সবার মাঝেই কাজ করতো ফুর্তির মেজাজ, আর সেখান থেকেই আরেকটু ভরাট দেহ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠে।
অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, ৫০’এর দশকের আবেদনময়ী নারীদেরকে আজকের যুগে ‘প্লাস সাইজ’ হিসেবে ধরা হবে। যদিও একালের মডেলদের তুলনায় তাদেরকে সামান্য ভারী বলা যায়, সিনেমার তারকা অভিনেত্রীরা কিন্তু বেশ ছিপছিপে গড়ন অধিকারী ছিলেন। তথ্যমতে, সে আমলে বেশিরভাগ রূপালি পর্দার নারীদের বিএমআই ছিলো ১৮.৮ থেকে ২০.৫ এর মাঝামাঝি, যা গড়পড়তা নারীদের ২৩.৬ মাত্রার চেয়ে বেশ কম ছিলো। তাই আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা ভরাট গড়নের দেহকেই নারীদের জন্য আদর্শ বলা হলেও, সাধারণ নারীদের দেহের গড়নের সাথে এই মাপকাঠির ভালো রকমের অসামঞ্জস্যতা ছিলো বলা যায়। এই দশকের একটি নিউজরিলে দেখা যায়, আমেরিকার একটি শহরে আয়োজিত হয়েছিলো ‘মিস ফ্যাট অ্যান্ড বিউটিফুল’ প্রতিযোগিতা। আধুনিক সময়ের প্রেক্ষাপটে এমন আয়োজন করে কোন নারীকে ‘মোটা’ উপাধি দেয়া হচ্ছে- এমন কথা কল্পনাই করা যায় না। আর সেই ৫০’এর দশকের এই প্রতিযোগিতায় যেসব নারী অংশ নিয়েছিলেন, বর্তমান যুগের স্ট্যান্ডার্ডে স্থুল হিসেবে বিবেচনাও করবে না কেউ! এ থেকেই প্রমাণিত হয়, ছিপছিপে দেহ অনেক দিন ধরেই ছিলো নারীদের জন্য আরাধ্য বিষয়।
৬০ এর দশকের শেষ থেকে ৯০-এর দশক পর্যন্ত
ষাটের দশক থেকেই পশ্চিমাদের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও জীবনধারায় পরিবর্তন আসা শুরু করে। বাড়ি গাড়ি পেয়ে ঘরে বসে থাকা গৃহিণীর জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলো না পশ্চিমের নারীরা। ৫০’এর দশকের রক্ষণশীল জীবনধারার বাইরে বের হয়ে আসতে চেয়েছিলো সে সময়ের তরুণেরা। এই যুগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেল ছিলো টুইগি- আর তা থেকেই বোঝা যায়, ছিপছিপে একহারা গড়ন আবার হয়ে উঠে ফ্যাশনেবল।
সত্তরের দশকে নারী স্বাধীনতার স্রোত আরও জোরে বইতে শুরু করলেও, পাতলা গড়নের প্রতি মোহ তখনও চলমান ছিলো। টুইগির চেয়ে ফারাহ ফসেটের গড়ন সামান্য চওড়া হলেও দিনশেষে তিনিও ছিলেন ক্ষীণ গড়নের একজন নারী- আর তিনি ছিলেন এই সত্তরের দশকে সবচেয়ে আবেদনময়ী একজন নারী। মেকআপ আর ফ্যাশনে প্রাধান্য পেত ‘ন্যাচারাল লুক’। ষাটের দশকে যেমন প্রকট সব ফ্যাশন ট্রেন্ড চালু হয়েছিলো, এই দশকে তেমনটি ছিলো না। নারীদের মধ্যে লম্বা চুল খোলা রেখে দেয়ার প্রবণতাই ছিলো বেশি।
আশির দশক নিয়ে আসে ‘সুপারমডেল’-দের যুগ। তামাটে, লম্বা, পাতলা কিন্তু সুগঠিত দেহই ছিলো নারীদের ‘আদর্শ’ দেহের আদল। ক্ষীণকটি কিন্তু ভরাট বক্ষযুগলবিশিষ্ট দেহ তখনও ছিলো আবেদনময়তার মাপকাঠি। অভিনেত্রীদের দেখে নয়, বরং মডেলদের ফ্যাশন আর দেহের গড়ন দেখেই সেই সময়ের নারীরা বেশি অনুপ্রাণিত হতেন। যদিও গড়পড়তা নারী আর ফ্যাশন মডেলের দেহের প্রস্থে ছিল বিস্তর ফারাক!
চিকন দেহের এই প্রতিযোগিতা আরও বেড়ে যায় ৯০’এর দশকে। ব্রিটিশ মডেল ‘কেট মস’-এর গড়ন সেই ষাটের দশকে ক্ষীণদেহের জন্য বিখ্যাত মডেল ‘টুইগি’কেও প্রায় হার মানিয়ে দিয়েছিলো। কেট মসের বিএমআই ছিলো মাত্র ১৬, আর তার মাধ্যমেই এই দশকে ‘হিরোইন শিক’ বা হাড্ডিচর্মসার গড়নের ট্রেন্ড জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। মজার ব্যপার হলো, ৯০’এর দশক আর ভিক্টোরিয়ান যুগের মধ্যে একটি অদ্ভুত মিল আছে- তা হলো এই দুই সময়েই মৃত্যুপথযাত্রীদের সাথে তুলনীয় দেহের গড়নকে সুন্দর বলে ধরা হতো! ভগ (vogue) ম্যাগাজিনের পাতা ঘেঁটে বলাই যায়, আদর্শ নারীদেহের গড়ন সবচেয়ে বেশি সরু ছিলো এই নব্বইয়ের দশকেই।
‘নিখুঁত’ মানে আসলে কী?
সৌভাগ্যের বিষয় হলো, আমরা এমন একটি যুগে প্রবেশ করছি যখন গণমাধ্যমে জাতি কিংবা গড়ন নির্বিশেষে সৌন্দর্যের প্রশংসা করা হয়- যদিও আরও অনেকটা পথ পাড়ি দেয়া বাকি। ২০১৭ সালে ‘নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উয়িক’ শুরু হওয়ার আগে আমেরিকার ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাউন্সিল সকল ডিজাইনারের কাছে একটি বার্তা পাঠায়- যেখানে তারা ডিজাইনারদের মনে করিয়ে দেয় ‘নিউ ইয়র্ক শহরে বাস করে নানা জাতির নানা গড়নের বৈচিত্র্যময় সব মানুষ। আমরা চাই আমাদের এই আয়োজনে এই বৈচিত্র্যের উদযাপন হোক।’ তার জন্যেই তারা ডিজাইনারদের উৎসাহিত করেছিলো বিভিন্ন গড়ন আর জাতির মডেলদের সাথে কাজ করতে।
এও মনে রাখা দরকার যে ইতিহাস জুড়ে আমরা বেশিরভাগ সময়েই নারীর যেই ‘আদর্শ’ গড়নের রূপ দেখেছি- তা এসেছে কোন পুরুষের কল্পনা থেকেই। বর্তমানে ফটোশপ করার প্রবণতাও যেন সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রত্যাশাই প্রতিষ্ঠা করছে। ফটোশপের ডিজিটাল জাদু দিয়ে অসম্ভব বডি স্ট্যান্ডার্ড বেঁধে দেয়া হচ্ছে- যা বাস্তবে কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়। কল্পনার নারীদেহের অবয়ব কিংবা ডিজিটালি বদলে দেয়া ছবির মতো দেহ বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিবর্জিত। সময়ের সাথে স্ট্যান্ডার্ড যে বদলেই চলেছে, তা হয়তো এতক্ষণে আমরা বুঝতে পেরেছি। তাই ‘বডি স্ট্যান্ডার্ড’ আসলে একটি ক্ষনস্থায়ী ব্যাপার, সময়ের সাথে বদলেই চলবে।
হতে পারে এ সময়ের মাপকাঠিতে আপনার দেহ ‘আদর্শ’ নয়, তাতে কী আসে যায়? ‘নিখুঁত’ বা ‘আদর্শ’ হচ্ছে একটি রূপকথা, যা বাস্তবের সাথে কখনোই মিলবে না। সে কারণেই নিজের এই খুঁতে ভরা সুন্দর দেহটিকে নিয়েই চলুন খুশি থাকি, জীবনের উৎসবে মেতে থাকি।
[নর-নারীর সৌন্দর্য যে স্থিরনির্দিষ্ট কিছু নয়, যুগের রাজনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত– এটি কমবেশি আমরা সবাই জানি। বর্তমান লেখাটিতে ‘পার্ফেক্ট’ নারীদেহের গড়ন বিষয়ে মূলত পাশ্চাত্যের ধারণা রূপান্তরশীল ইতিহাসের কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই সৌন্দর্যবোধ প্রাচ্যের সৌন্দর্যবোধের চেয়ে অনেক দিক দিয়েই ভিন্ন। সেমসেম- এ পরবর্তীতে নারী-পুরুষের প্রাচ্যের সৌন্দর্যবোধ নিয়েও ধারাবাহিক লেখা প্রকাশিত হবে। — সম্পাদক ]
খাওয়ার বদলে ‘বাইরে খাওয়া’—বাঙালি মধ্যবিত্তের নতুন বন্দোবস্ত?
ম্যাচ শেষে আফগানিস্তান কোচ জনাথন ট্রট বলেন তার এই ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই, ‘আমার কোন ধারণা নেই। কখনো কি দুটি সুপার ওভার হয়েছে? আমি এটাই বলার চেষ্টা করেছি। এটা একদমই নতুন ব্যাপার। নিয়মগুলো আমরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করছি, জানছি।’
[elementor-template id="1854"]
সিমু নাসের
সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক
সিমু নাসের
সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক
সিমু নাসের
আরেফিন
সিমু নাসের
আরেফিন
সিমু নাসের
আরেফিন
আরেফিন
'টুয়েলফথ ফেল'কে কেন্দ্র করে মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়েই এই লেখা। ভারত ও বাংলাদেশে 'টুয়েলফথ ফেল' সিনেমাটির জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হলো এর প্রেমকাহিনী।
সিমু নাসের
আরেফিন
সিমু নাসের
আরেফিন
সিমু নাসের
আরেফিন
আরেফিন
খাওয়ার বদলে ‘বাইরে খাওয়া’—বাঙালি মধ্যবিত্তের নতুন বন্দোবস্ত?
নব্বই দশকের এক্কেবারে শুরুর দিক। হুট করে বাড়িতে ফুপা এসেছেন। যেমন-তেমন আসা না। বিদেশ থেকে এসেছেন, ঢাকায় একবেলা বিশ্রাম নিয়ে তারপর আস্তে-ধীরে বাড়িতে যাবেন। যেহেতু হুট করে আসা, বাসায় নেই কোনো প্রস্তুতি। ‘অগত্যা’ আনানো হলো নান্নার মোরগ-পোলাও। জামাই-মানুষ, তারপরও রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনানো হচ্ছে, বাসার মানুষদের মনে হচ্ছে খুবই কুণ্ঠিত। আমাদের ছোটোদের তাতে কী আসে যায়! বাসার মাঝে ‘হোটেলের খাবার’, নতুন ব্যাপার-স্যাপার! বহুদিন মুখে লেগে ছিল সেই মোরগ পোলাওয়ের স্বাদ।
একই বাসা। সময়ের সাথে সাথে বদলেছে বাসার ‘মুরুব্বির আসন’। আবার এসেছে জামাই, সেটা আমার বোন-জামাই। সিদ্ধান্ত হলো, প্রায় প্রায়ই যেহেতু এখানে-সেখানে এটা-সেটা খাওয়ানো হয়, জামাইয়ের সম্মানে এবার ঘরে রান্না করা হবে। হলো রান্না। একেবারে আয়োজন করা রান্না—এখনকার সময়ে অনেকটা বিরল অভিজ্ঞতা! এই খাবারের স্বাদও মুখে লেগে রইল অনেকদিন।
ওপরের উদাহরণটা নিছকই উদাহরণ, নিজের জীবন থেকে নেওয়া একটা উদাহরণ আরকি। কিন্তু এদেশের অন্তত শহরাঞ্চলে তাকালে দেখা যায়, এটা মোটেও আমার একার উদাহরণ না। গত কয়েক দশকে ঢাকার মধ্যবিত্ত সমাজের ‘বাইরে খাওয়া’ বিষয়টা ‘একেবারে না-পারতে’ বা ‘ঠ্যাকায় পড়ে খাওয়া’ থেকে হয়ে উঠেছে প্রাত্যাহিক বাস্তবতা। এটা এখন এমনই এক বাস্তব সত্য, যেটাকে যুক্তি-তর্ক দিয়ে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করার কিছু নেই। তারপরও বলি। বাংলাদেশের কুইক সার্ভিস রেস্তোরাঁ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে এই বাজারে আয় হয়েছে প্রায় ১৭৫৪ মিলিয়ন ডলার। ২০২৮ সালেই যা গিয়ে দাঁড়াবে ২৬৫৩ মিলিয়ন ডলারে। বুঝতে পারছেন ব্যাপার? ফুলেফেঁপে কলাগাছ পার হয়ে বটগাছ হয়ে যাওয়ার অবস্থা! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো দ্রুত পরিবর্তিত কর্মজীবন, বাড়ন্ত মধ্যবিত্ত আর খাবারের অনলাইন ডেলিভারি।
কিন্তু কেন বলছে বিশেষজ্ঞরা এমন? আসলেই কি যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দিয়ে ধরা যায় একে? চলুন চেষ্টা করি।
যুক্তি ১:সময় কখনও ‘নানের’ জন্য অপেক্ষা করে না
আজকের শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনে মহামূল্য এক সম্পদ, তার নাম সময়। বিশেষ করে যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মজীবি, সেখানে বাসায় ফিরে রান্না-বান্না করার সময়ই কই; সেইসাথে মানসিক শক্তি আর আগ্রহই বা কই। আগে যেখানে স্কুল বা অফিস আর বিকালে টিভি দেখে, আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় টিভি দেখা ছিলো চক্রের মতো চলমান; এখনকার জীবনে কী যে হয়ে যাচ্ছে সেই তাল মেলানোই কঠিন! দ্রুতগামী, ব্যস্ত ও অনেকখানি বিশৃঙ্খল।
কর্মব্যস্ত পরিবারে যদি বলা হয় ছুটির দিনটা বাইরেই খাওয়া যাক—এরচেয়ে খুশীর কথা আর নেই। অফিস শেষে জ্যাম ঠেলে বাড়ি এসে আবার বাজার করা, রান্না করা—এসবের বদলে ১৫ মিনিটে রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসে পড়া কী যে স্বস্তির! অনেকে আবার থাকেন ব্যাচেলর। একা বাসায় নিজের জন্য রান্না আর কতক্ষণ ভাল্লাগে—অন্তত বিকল্প যখন হাতের কাছেই আছে? তাই রেস্টুরেন্ট হয়ে উঠছে এক বিকল্প সংসার। সেই রেস্টুরেন্টের জানালার ছবি তুলেই মানুষ স্টোরিতে মিউজিক বসায়—আমার জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়।
পাল্টা যুক্তি ১: ফুড ডেলিভারি অ্যাপেও তো সময় বাঁচে। তাহলে মানুষ রেস্টুরেন্টে যায় কেন?
ভালো যুক্তি। ফুড ডেলিভারি অ্যাপ আছে। অ্যাপের ব্যবহারও আছে। বিশেষ করে ব্যস্ত অফিসের ফাঁকে টুক করে পছন্দের খাবারটা খেয়ে নিতে, কিংবা রেস্টুরেন্টে যাবার আলস্যি বা অসুবিধা থেকে বাঁচতে ঘরে বসেই অর্ডার করেন অনেকে। আছে বিভিন্ন হোম কিচেন, সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ। মানুষ সেখান থেকেও অর্ডার করছে। বিশেষ করে কোভিডের লকডাউনে এইসবই মানুষকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ দিয়েছিল ভালোভাবে।
এই পাল্টা যুক্তির উত্তরও আবার আছে। খাওয়ার ব্যাপারটা এই সময়ে এসে আপনি শুধু উদরপূর্তি দিয়ে দেখলেই তো হবে না! রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়াটা একধরনের সামাজিকতা, মুড পরিবর্তন, সময় কাটানো। অনেক সময় ফ্লেক্স নেওয়াও। এই আউটিঙের স্বাদ ভাই আপনাকে ফুড ডেলিভারি দিতে পারবে না! হ্যাঁ, ফুড ডেলিভারিতে অর্ডার করে খাচ্ছে মানুষ। কিন্তু আরও বহু বহু মানুষ রেস্টুরেন্টে যাচ্ছে। ফেলে ছড়িয়ে খাচ্ছে, হাহাহিহি করছে, ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান দিচ্ছে—দেখো আমি একটা সুখের সময় কাটাচ্ছি, রেস্টুরেন্টে ভালোটা-মন্দটা খাচ্ছি।
যুক্তি ২: রেস্টুরেন্টের ছাড়া বিনোদনের আর বিকল্প কোথায়? বিকল্প দেখানোর মানুষটাও তো এখন নাই!
হ্যাঁ, মানুষ ছিলেন একজন আমাদের। তিনি আমাদের ডিমের বিকল্প দেখিয়েছেন, বেগুনের বিকল্প দেখিয়েছেন, মাংসের বিকল্প দেখিয়েছেন। ওই যে, কাঁঠালের বার্গার বানিয়ে খেতে বললেন। কিন্তু, মানুষটা চলে যাওয়ার পর কেউ আর আমাদের বিকল্প দেখায় না! ঢাকা শহরে বিনোদনের জন্য খুব অল্প পার্ক, আরও অল্প খেলার মাঠ। মানুষ দুদণ্ড বসবে কোথায়? আর যেখানে গিয়ে বসতে পারে, সে জায়গার নিরাপত্তা কোথায়? আর যে জায়গায় এগুলোও ম্যানেজ করা সম্ভব, তেমন জায়গায় এন্টারটেইনের সুযোগ কোথায়? হাতেগোনা লাইব্রেরি, ধীরে ধীরে কমতে থাকা সিনেমা হল, নাট্যমঞ্চ। নাটোরের বনলতা সেনও নেই, আর আপনিও জীবনানন্দ দাশ না যে কেউ আপনাকে দুদণ্ড শান্তি দেবে। তাহলে?
শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে, তারসাথে পাল্লা দিয়ে কমছে বিকল্প বিনোদনের জায়গাগুলো। আর, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেস্টুরেন্ট। সেটারও নানান রকমভেদ। কাজিনরা সব একসাথে হলে হইহই করে পুরান ঢাকায়, অফিসিয়াল মিটিঙে ধানমণ্ডির কোনো কফিশপ, বনানির কোনো রুফটপ রেস্টুরেন্ট। একান্তে নিজের মানুষটার সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে হয়তো পাঁচতারা হোটেলে বাই ওয়ান গেট ওয়ান কার্ড যোগাড় করে ব্যুফে! অথবা রাস্তার কোনো সস্তা হোটেলে বদ্ধ কেবিনে বন্দী দুজনে রুদ্ধশ্বাস কত অপেক্ষার! খাবার এখানে মুখ্য না, উপলক্ষ মাত্র।
এমনকি রেস্টুরেন্টে জন্মদিন পালন, অফিসের ফেয়ারওয়েল, স্কুল-কলেজের রিইউনিয়ন, আর প্রপোজ করার ঘটনাও এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবার যেন পার্শ্বচরিত্র, প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ‘স্থান’।
পাল্টা যুক্তি ২: কিছু খোলা পার্ক, বইমেলা, কিংবা রবীন্দ্র সরোবরও তো আছে!
আছে। সেইসাথে এখনকার সময়ের মধ্যবিত্তের ভিন্ন রকম চাহিদাও আছে। পার্কে বসে বাদাম ছিলতে ছিলতে ভাব-ভালোবাসার কথা বলতে ভালোই লাগে। একবার-দুবার, তারপর? তারপরই বসতে গেলে আপনার দরকার হবে মোবাইলে চার্জ দেওয়ার। একটা আরামদায়ক চেয়ার। ওয়াইফাই। সুযোগ থাকলে এসি। তারচেয়ে বড় জিনিস, প্রাইভেসি! এই জিনিস প্রতিটা মানুষ প্রাপ্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রেস্টুরেন্টেই ওটা এখন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। অন্তত অন্যান্য জায়গার মতো রেস্টুরেন্টে আপনি বা আপনারা প্রধান দ্রষ্টব্য না।
তারপর নিরাপত্তা, মশার হাত থেকে বাঁচা, কারেন্ট চলে গেলে জেনারেটর। ও ভালো কথা, রেস্টুরেন্টে কিন্তু খাবারও পাওয়া যায়।
এই আধুনিক আরামগুলো নগরবাসী খোঁজে। তাই সে উপভোগ করতে বের হতে চাইলে প্রথমে এটা সেটা বিকল্প হাতড়ায়, তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে তাকেই বলতে শোনা যায়, এই জানিস, অমুক রেস্টুরেন্টের ফিশ বার্গারটা কিন্তু দুর্দান্ত। অ্যাম্বিয়েন্সটাও ইনস্টা ফ্রেন্ডলি। চলে আয় ৫টায়। আড্ডা হবে।
যুক্তি ৩: সামাজিক স্ট্যাটাস ও মিডিয়া প্রভাব—‘রেস্টুরেন্ট কালচার’ এখন একধরনের স্বীকৃতি
খাবার কী খাচ্ছেন, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে খাচ্ছেন—খাবার নিয়ে একটা পুরানো দর্শন। এই দর্শনই এখনকার বিশ্বে অনেকটা আপ্তবাক্য হয়ে উঠেছে। আর আপনি কীভাবে খাচ্ছেন, কোন পরিবেশে খাচ্ছেন, সেটা দেখাতে এই সোশ্যাল মিডিয়ার জমজমাট সময়টাই তো মোক্ষম! ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের কল্যাণে খাবার এখন শুধু খাওয়ার বস্তু নয়—এটা দেখানোর, উপস্থাপনের ও ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। কফিশপে বসে ‘সিনামন লাতে’ খাওয়ার ছবি, কোনো নতুন ফিউশন রেস্টুরেন্টে গিয়ে ওপেন কিচেনের ভিডিও—এসব এখন একধরনের ‘লাইফস্টাইল স্টেটমেন্ট’। উঁহু, নাক বেঁকিয়ে লাভ নেই, ওটা আপনিও করেন। হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি/ভিডিও/টেক্সট দেন, অথবা দেখেন, অথবা দুটাই করেন। রান্নার মতোই গুরুত্বপূর্ণ এখন ‘রিভিউ করা’, ‘ভ্লগ বানানো’, ‘রেটিং দেওয়া’ । ভোজনরসিকতা এখন শুধু রসনা তৃপ্তি না, সামাজিক পুঁজি অর্জনের পথও বলা চলে।
এই অংশে আরও বলা দরকার—খাদ্যসংস্কৃতির এ যে পরিবর্তনটা ঘটছে, তার মধ্য দিয়ে এখন শ্রেণি, রুচি, ও চিন্তার নতুন ‘সাংস্কৃতিক মানচিত্র’ তৈরি হচ্ছে। বনানীর রুফটপ রেস্টুরেন্ট আর মোহাম্মদপুরের পারিবারিক খাবারের দোকান—দুটার ভিজ্যুয়াল ও ভাষা আলাদা। ফলে এই রেস্টুরেন্ট কালচার শ্রেণি-ভিত্তিক সংস্কৃতি গঠনের মাধ্যমেও পরিণত হয়েছে।
পাল্টা যুক্তি ৩: আমরা কী খাচ্ছি—সেটা কি এখন গৌণ হয়ে উঠেছে?
এই প্রবণতার ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক বিপন্নতা। খাবার এখন কেবল দেখার বিষয় হয়ে গেছে। স্বাদের, পুষ্টির বা ইতিহাসের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ‘প্রেজেন্টেশন’। বুমারসের চাইনিজ প্ল্যাটার নাকি লায়লাতির চাইনিজ প্ল্যাটার—কোনটা ইনস্টাগ্রামে ফটোজেনিক, সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখ্য ।
সত্যি বলতে, এই প্রবণতা একধরনের বিকৃতি তৈরি করছে। তবে এটাও মানতে হবে, খাবার কেবল পুষ্টি বা স্বাদের বিষয় নয়—এটাও একধরনের গল্প বলার উপায়। রেস্তোরাঁয় খাওয়ার মাধ্যমে অনেকে নিজেদের অভিব্যক্তি, রুচি এবং চিন্তার পরিচয় দিতে চায়। তাতে কোনো সমস্যা নেই, তবে স্বাদের, শিকড়ের আর অর্থপূর্ণ সামাজিকতার জায়গাটা যেন থাকে।
যুক্তি ৪: মধ্যবিত্তের পকেট ফ্রেন্ডলি বিলাস
একসময় রেস্টুরেন্ট মানেই বিলাসিতা। এখন সেটাই অনেক মধ্যবিত্তের জন্য ‘সাশ্রয়ী বিলাস’। এক কাপ কফি কিংবা ২০০ টাকার একটি বিরিয়ানি প্লেট দিয়ে আপনি নিজেকে একটু ‘পুরস্কৃত’ করতেই পারেন। ভ্রমণ বা বড় বিনোদনের সুযোগ যেখানে সীমিত, সেখানে এই ছোটো খরচেই অনেক মানুষ আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে।
শহুরে ক্লান্তি, কাজের চাপ, পারিবারিক সংকট—সবকিছু থেকে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া যায় এই খাবার-কেন্দ্রিক সামাজিকতায়। অন্য মানুষের কথা কী বলবো, আমিই তো ঠিক করে রেখেছি এই লেখাটা শেষ করে এক প্লেট ঝাল দেওয়া ভেলপুরি খাব। একটা ‘মাইক্রো রিওয়ার্ড’ না পেলে কি চলে?
অনেকে একা যান, অনেকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে যান। যান অনেকেই। রেস্তোরাঁ আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছে একধরনের মানসিক আশ্রয়।
খাবার কী খাচ্ছেন, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে খাচ্ছেন—খাবার নিয়ে একটা পুরানো দর্শন। এই দর্শনই এখনকার বিশ্বে অনেকটা আপ্তবাক্য হয়ে উঠেছে। অলঙ্করণ করেছেন সামিউল
পাল্টা যুক্তি ৪: এই ‘সস্তা বিলাসিতা’র জন্য কি আমরা হারাচ্ছি দীর্ঘমেয়াদে আত্মনির্ভরতা?
খাবার নিজে রান্না করা, নিজস্ব খাদ্য সংস্কৃতি বজায় রাখা একধরনের আত্মপরিচয়ের অংশ। যখন পরিবার নিজেরা রান্না করা বন্ধ করে দেয়, তখন খাবারের মধ্যে থাকা পারিবারিক বন্ধনও হারিয়ে যেতে পারে।
এ নিয়ে অবশ্যই ভাবা দরকার। তবে প্রতিদিনের একঘেয়েমি ও চাপ থেকে স্বস্তি পেতে যদি রেস্তোরাঁয় যাওয়া হয়, তা হলে সেটাকে পুরোপুরি নেতিবাচক না বলে, তা ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। হ্যাঁ, সচেতনতা জরুরি—কোথায় থামতে হবে, সেটাও জানতে হবে।
যুক্তি ৫: শ্রেণি-নির্ভর রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি—নতুন সামাজিক বিভাজন?
শহরের রেস্তোরাঁ সংস্কৃতির প্রসার নতুন এক সাংস্কৃতিক শ্রেণি তৈরি করেছে। দামি রুফটপ ক্যাফে, ফিউশন রেস্টুরেন্টে যাওয়া এখন নিম্নমধ্যবিত্ত বা শ্রমজীবী মানুষের জন্য দুর্লভ। যার কারণে এই রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি একধরনের সামাজিক বিভাজনেরও প্রতীক হয়ে উঠছে—যেখানে কিছু মানুষ শুধু ফেসবুক ছবির মাধ্যমে এই জীবনযাপনকে চেনে।
পাল্টা যুক্তি ৫: নতুন উদ্যোক্তা, ফুড কার্ট, লোকাল খাবার—এই বিভাজন কি কাটিয়ে উঠছে?
হ্যাঁ, ফুড কার্ট, লোকাল ফুড আর নতুন উদ্যোক্তাদের কারণে এই ফাঁকও কিছুটা কমছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তরুণ উদ্যোক্তা বা এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেই এখন এমন অনেক হোম-বেইজড ফুড বিজনেস গড়ে উঠছে যারা তুলনামূলক কম দামে বৈচিত্র্যময় খাবার পরিবেশন করছে। ফলে একধরনের ইনক্লুসিভিটির সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ব্যাপারটা আমাদের মনোযোগ দাবি করে—খাদ্য যদি আত্মপ্রকাশ হয়, তবে তা যেন কেবল এক শ্রেণির একচেটিয়া না হয়। শহুরে খাদ্যচর্চায় একইসাথে ইনক্লুসিভিটি রাখা আর বহুমাত্রিক হওয়া খুবই প্রয়োজন।
এতসব যুক্তিতে তাহলে কী দাঁড়াল?
বলতে গেলে কিছু দাঁড়ায় নাই। কোনো কিছু দাঁড় করানো এই লেখার উদ্দেশ্যও না আসলে। এই সময়ে ‘বাইরে খাওয়ার’ দৃশ্যপটটা কথায় কথায় একটু সামনে নিয়ে আসা আরকি।
বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্তের বাইরে খাওয়ার প্রবণতা নিয়ে যারা নাক উঁচু করেন, তারা প্রায়ই একটা আদর্শ বাঙালি পরিবার কল্পনা করেন—যেখানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সবাই একসঙ্গে খায়, মা রাঁধেন, বাবার পছন্দের তরকারি হয়, এবং সন্তানরা ‘বাসার খাবারেই তৃপ্ত’ থাকে। এই কল্পনা এই সময়ে এসে যতটা না বাস্তব, তার চেয়ে বেশি এক ধরনের আদর্শিক নস্টালজিয়া।
বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্তের রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভ্যাস তাই এখন আর শুধু খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন না, একটা বিস্তৃত জীবনচর্চার অংশ। এটাকে বলা যায় সময়ের ব্যবস্থাপনা, সামাজিক অবস্থানের প্রকাশ, বিনোদনের ঘাটতির প্রতিক্রিয়া আর একধরনের মানসিক মুক্তির খোঁজ।
শহরে যদি বিকল্প সাংস্কৃতিক পরিসর, নিরাপদ উন্মুক্ত স্থান ও সাশ্রয়ী বিনোদনের ব্যবস্থা বাড়ানো যায়, তাহলে মানুষ রেস্তোরাঁকে একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে নির্ভর করা কমিয়ে দেবে—এটা বলতে সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না। কিন্তু তার আগে আমাদের স্বীকার করতে হবে—রেস্তোরাঁ এখন আর শুধু খাওয়ার জায়গাই না। এটা হয়ে উঠেছে জীবনযাপন, আত্মপ্রকাশ ও আধুনিক শহুরে বাস্তবতার প্রতীকও।
আমাদের প্রয়োজন এই পরিবর্তনের গভীরে যাওয়া—তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বুঝে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার অভ্যাসকে আরও অর্থবহ, ভারসাম্যপূর্ণ আর সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করা। এই আরকি।